খাবারের জন্য যুদ্ধ হতেই পারে! কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাবে খাবারের জন্য এমনটা শুনেছেন? ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে এমন ঘটনারও। ঠিক কী হয়েছিল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
খাবার জোগাড়ের জন্য লড়াই। মানুষের আদিম প্রবৃত্তিগুলোর অন্যতম। সেই আদিম মানুষেরা একে অপরের সঙ্গে কিংবা এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করত এই লক্ষ্যে। এক জায়গার খাবার ফুরোলে চলত অন্য জায়গা দখলের লড়াই। খাবারের লড়াই আসলে টিকে থাকারই লড়াই। কিন্তু খাবারের জন্য যুদ্ধ নয়, বরং খাবারই যুদ্ধ থামিয়ে দিচ্ছে, এমনটা কি শুনেছেন কখনও?
হ্যাঁ, এমন ঘটনারও সাক্ষী ইতিহাস। যদিও তা যে সময়ের কথা, তখন আর নিছক খাবারের জন্য যুদ্ধ হয় না। এখনও যেমন, যুদ্ধ আসলে কেবলমাত্র আধিপত্য বিস্তারের খেলা। ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াইও বটে। তখনও ঘটছিল প্রায় তেমনই এক কাণ্ড। খ্রিস্টধর্মের ওপর কাদের আধিপত্য থাকবে, তা নিয়েই তখন যুযুধান ইউরোপের দুই পক্ষ। জুরিখের প্রোটেস্ট্যান্ট এবং জুগের ক্যাথলিক দল লড়ে চলেছে একে অন্যের বিরুদ্ধে। যুদ্ধের দামামায় কাঁপছে এলাকা। প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। রক্ত ঝরছে অবিরত। তবু সুইটজারল্যান্ডের কাপেল এলাকায় যুদ্ধ থামার নাম নেই। আর এইরকম সময়েই নাকি, এক খাবারের দৌলতেই থেমে গিয়েছিল যুদ্ধের হুংকার।
কীভাবে? তাহলে খুলেই বলা যাক।
সেটা ১৫২৯ সালের কথা। কাপেলের যুদ্ধ চলতে চলতে ক্লান্ত সেনারা। না খাওয়া, না বিশ্রাম, না পরিবারের কাউকে দেখতে পাওয়া- ক্লান্ত জীবন কেবল যুদ্ধের লক্ষ্যে যুঝে চলেছে। একসময় সেনারাই ঠিক করে, খাওয়ার জন্য অন্তত বিশ্রাম নিতেই হবে খানিক। অতএব, খানিকক্ষণের জন্য যুদ্ধবিরতি। আর খিদের তো কোনও সীমান্ত হয় না। কবি যেমন বলেন, “একই থালায় দুজন খাবে/ যুদ্ধ হয়তো আসছে কাল”। কিন্তু সেদিন এক থালায় খাবার আর যুদ্ধকে আসতে দেয়নি পরদিন। শোনা যায়, মিল্ক স্যুপ নামের এক খাবার বানানো হয়েছিল সেদিন। কীভাবে বানানো হয়েছিল সেই দুধের স্যুপ? সে রেসিপি এখন ইতিহাসের পাতায় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কোনও কোনও ঐতিহাসিক বলেছেন, দুধ তো ছিলই, সঙ্গে ফলমূল, মাংস- হাতের কাছে যা মেলে সেসব দিয়েই বানানো হয়েছিল সেই খাবার। আর তা নাকি বানানো হয়েছিল একটাই বিরাট পাত্রে, দু’দলের জন্যই।
কথা ছিল, স্যুপ খাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ থেমে থাকবে। কে জানে, সেনারা ইচ্ছে করেই স্যুপ শেষ করতে দেরি করেছিলেন কি না। নাকি দীর্ঘদিনের বুভুক্ষু মানুষেরা সেদিন খাবারের সামনে দাঁড়িয়ে সত্যি সত্যিই বুঝতে পেরেছিল যে, খিদে ছাড়া মানুষের অন্য শত্রু নেই। আর সেই শত্রুর সঙ্গে এককাট্টা হয়েই যুঝতে হয়। ইতিহাস সেসব মুখের কথা মনে রাখেনি। কেবল মনে রেখেছে যে, যে যুদ্ধের মাত্র কয়েক ঘণ্টা থেমে থাকার কথা ছিল, তা কয়েক বছরের জন্যই থেমে গিয়েছিল। একটি খাবারের জন্যই একটা গোটা যুদ্ধ থেমে গিয়েছিল সেদিন, এমন করেই তাই এই ঘটনাকে মনে রেখে দিয়েছে ইতিহাস। সে ইতিহাসের পাঠ নিলে মানুষও হয়তো একদিন একে অপরের খিদের কাছেই নতজানু হয়ে দাঁড়াবে, বন্দুকের নলের সামনে নয়।