মন্দির বা মণ্ডপে আসনে বসে পুজো করেন পুরোহিত। কিন্তু বাড়িতে সেই নিয়ম সবসময় মানা হয় না। সময়ের অভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পুজো সেরে ফেলেন। শাস্ত্রমতে এমনটা করা যায়? বাড়িতে পুজোর সময় ঠিক কোন কোন নিয়ম মানা উচিত? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অধিকাংশ গৃহস্থ বাড়িতেই নিত্যপুজোর চল রয়েছে। কিছু কিছু বাড়িতে প্রতিষ্টিত বিগ্রহও রয়েছেন। নিষ্ঠাভরে পুজো না করলে বিপদ। এখানেই না বুঝে ভুল করে ফেলেন অনেকে। স্রেফ পুজো করার ধরণে কিছু সামান্য ভুল, দেবতার রোষের কারণ হতে পারে। তাতে সংসারে নেমে আসতে পারে ঘোর অমঙ্গল।
প্রার্থনার কোনও নিয়ম হয় না। যে কোনও অবস্থায় ভক্তিভরে ঈশ্বরকে স্মরণ করলে, তিনি সাড়া দেন। তবে আচার নিয়ম পালনেরও গুরুত্ব রয়েছে। সেখানেই প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে পুজোয় বসা উচিত? শাস্ত্র বলছে, আসনে বসে পুজো করাই সঠিক নিয়ম। বাড়িতে হোক বা মন্দিরে, আসন ছাড়া দেবতার সামনে বসাই উচিত নয়। দাঁড়িয়ে পুজোর উল্লেখ নেই কোথাও। কেবলমাত্র আরতির সময় দাঁড়ানো যেতে পারে, তবে তারও নিয়ম রয়েছে। বাড়ির পুজোয় সাধারণত আরতি করা হয় না, হলেও সেটা বসে বসেই করা যেতে পারে। নিয়ম বলছে, যে দেবতার আরাধনা করা হচ্ছে, তাঁর আসন সবসময় পূজারির থেকে উঁচুতে হওয়া উচিত। তবেই প্রকৃত সমর্পন বোঝায়। আর মাটিতে বসে পুজো করলেই এমনটা বোঝানো সম্ভব। তবে কোন দিকে মুখ করে পুজো করা হচ্ছে, সেটাও খেয়াল রাখার বিষয়। নিয়ম বলছে, পূর্ব দিকে মুখ করে পুজো করা সবথেকে ফলদায়ক। সম্ভব না হলে উত্তর দিকে মুখ করে বসে পুজো করা যেতে পারে।
অধিকাংশ হিন্দু বাড়িতেই পুজো করার নির্দিষ্ট স্থান থাকে। কারও বাড়িতে একটা গোটা ঘরই পুজোর জন্য ব্যবহার করা হয়। শাস্ত্রমতে এই স্থানে সবসময় শুদ্ধাচারে প্রবেশ করা উচিত। অনেকেই এই ঘরে কোনও খাবার পর্যন্ত খান না। শাস্ত্রমতে ঘরের উত্তর-পূর্ব কোণ সবথেকে পবিত্র। একে ঈশানকোণও বলা হয়। মনে করা হয়, এই স্থানে স্বয়ং ঈশ্বরের বাস। তাই এখানে দেবতার সিংহাসন স্থাপন করলে সংসারে মঙ্গল হয়। শুধু তাই নয়, পুজোর ঘরে আরও কিছু নিয়ম মানা বাঞ্ছনীয়। মাথায় রাখতে হবে, একই দেবতার মূর্তি যেন একের বেশি না থাকে। সেক্ষেত্রে পরিবারে চরম অশান্তি দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, ঠাকুরের সিংহাসনের উপর কিছু রাখা উচিত নয়। ভারী কোনও জিনিস তো একেবারেই নয়। একবার পুজো হয়ে গেলে সেই ফুল নির্দিষ্ট সময়ের পর পরিষ্কার করে ফেলতে হয়। শুকনো ফুল দেবতার মূর্তিতে রাখা একেবারেই অনুচিত। শুদ্ধচিত্তে শুদ্ধবসনে পুজোয় বসতে হবে, মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে সঠিকভাবে, তাহলেই পুজোর সম্পূর্ণ ফল মিলবে।