শীতের রাত। এক বিছানায় দুজন। রাতের সঙ্গে ঘন হচ্ছে আদর। এমন পরিস্থিতিতে শিৎকার স্বাভাবিক। তাতে সঙ্গীর আপত্তি বা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু, কিছুক্ষেত্রে সঙ্গীর শিৎকারে বেজায় চটে যান অন্যজন। কারণ এই শব্দে তাঁর অ্যালার্জি রয়েছে! ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সঙ্গমের শব্দে উত্তেজনা বাড়ে! এমনটা অনেকেরই ধারণা। সিনেমাতেও যৌনদৃশ্যের ইঙ্গিত বোঝাতে, বিশেষ শব্দের প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু এমনও অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা সঙ্গমের সময় হওয়া শব্দ সহ্য করতে পারেন না। ঘাড়ের কাছে সঙ্গীর নিঃশ্বাস পড়লেই বেজায় অস্বস্তিতে পড়েন।
দেখতে দখেতে দুয়ারে হাজির শীতকাল। একইসঙ্গে বাক্স প্যাঁটরা গুছিয়ে চলে এসেছে- হাঁচি,কাশি,জ্বর, সর্দির মতো অনাগত অতিথিরা। উপেক্ষার উপায় নেই, লাভও নেই বটে, একটু অসাবধান হলে সমস্যা হবেই। কারও ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বারোমেসে। ডাক্তারির ভাষায় এটা এক ধরনের অ্যালার্জি। শীতকাল এলেই যা সহ্য করতে হয় অনেককে। তবে অ্যালার্জির দুনিয়ায় রকমফের হাজার। তার মধ্যে এমন কিছু বিচিত্র রোগ রয়েছে, যা শুনলেও বিশ্বাস করা কঠিন। মিসোফোনিয়া এমনই এক সমস্যা। এতে আক্রান্ত রোগীরা বিশেষ কিছু শব্দ সহ্য করতে পারেন না। শব্দ করে খাওয়া, চায়ে চুমুক দেওয়া, কাগজ মোড়ানো, ধাওব কিছু দিয়ে দাগ কাটা, এই সব ধরনের শব্দ এঁদের কানে এলেই বিপদ! মুহূর্তের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হবে শরীরে, যা কাটানো বেশ কঠিন। শুধু তাই নয়, এই সমস্যা যাদের রয়েছে, তাঁরা শীৎকারের শব্দও সহ্য করতে পারেন না। সহজ করে বললে ঘন ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ যা অনেকটা কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে, তা এঁদের কাছে চুরম অস্বস্তির বিষয়। কিন্তু সঙ্গমের সময় এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। সঙ্গীকে আরও উত্তেজিত করতে ইচ্ছা করেই অনেকে বিশেষ শব্দ বের করেন। এক্ষেত্রে তেমন কিছু করলে ফল হবে উলটো। চুমু খেতে গিয়েও অনেক সময় শব্দ হয়, সেটিও একেবারেই সহ্য করতে পারেন না মিসোফোনিয়া আক্রান্তরা। সব মিলিয়ে একথা বলাই যায়, এই রোগ রয়েছে এমন কারও সঙ্গে যে কেউ মিলন সুখ উপভোগ করবেন না।
সমীক্ষাও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সরাসরি সঙ্গমের প্রসঙ্গ উল্লেখ না থাকলেও, সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে এই রোগের শিকার হওয়া মানুষজন কতটা নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে বাধ্য হন। সমাজে থাকতে গেলে অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই হবে। সেখানে চিবানোর শব্দ, চুমুক দেওয়ার আওয়াজ, নাক ডাকা, বাতকর্ম এইসব ভীষণ স্বাভাবিক। কেউ যদি এই সবকিছু নিয়ে আপত্তি তোলেন তাঁকে আলাদা হতেই হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ হওয়ার নির্দিষ্ট কোনও কারণ নেই, অর্থাৎ আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। তবে সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে সুরাহা মিলতে পারে। বুঝে নিতে হবে কোন কোন শব্দে বেশি সমস্যা, চেষ্টা করতে হবে সেগুলো এড়িয়ে যাওয়ার। বিশষজ্ঞদের পরামর্শ অন্তত এমনটাই। এইভাবেই বেশ কিছুদিন কাটাতে পারলে, ওই শব্দের কারণে তৈরি হওয়া অস্বস্তি কমেও যেতে পারে। তবে সময় লাগবে ভালমতো। এছাড়া আরও একটা সমস্যা রয়েছে। এই রোগে আক্রান্তরা বুঝতেই পারেন না সমস্যাটা ঠিক কোথায়! অনেকেই এড়িয়ে যান। তাতেই আরও বড় আকার নেয় মিসোফিনিয়া। অনেক সময় এর থেকে আরও একাধিক অসুখ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। সেক্ষেত্রে সুস্থ হওয়া আরও কঠিন।