হাতে রাইফেল, পরনে সেনার পোশাক। বুকে অদম্য সাহস, চোখে লক্ষ্য অবিচল। শত্রুপক্ষের শিবিরে ঢুকে একে একে শত্রু নিকেশ করে ঘরের মেয়ে ফিরে এল ঘরে। কোথায় হল এই যুদ্ধ? কী বা ফলাফল হল তার? আসুন শুনে নিই।
পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে যারা অনবরত যুদ্ধ করে চলেছে ইজরায়েল তাদের মধ্যে অন্যতম। বিগত মাসখানেক ধরে প্রতিবেশী দেশ লেবাননের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। হিজবুল্লার সমস্ত অস্তিত্বকে মুছে দেওয়া হবে, এমনই পরিকল্পনা নাকি ইজরায়েলের। মাসখানেক আগে ইজরায়েলে ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান। তৎক্ষণাৎ পালটা প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইজরায়েল। টানটান উত্তেজনার মধ্যে যুদ্ধের হাল ধরতে মাঠে নামে সেনাবাহিনীর প্রমীলা কম্যান্ডো বাহিনী। পরিকল্পনা মাফিক সটান লেবাননে ঢুকে ‘হিজবুল্লা’র গোপন আস্তানায় হানা দেয় তারা। এই অতর্কিত হামলা সহ্য করতে পারেনি ‘হিজবুল্লা’র সংগঠন। অচিরেই এই যুদ্ধে পরাজিত হয় তারা। এই প্রমীলাবাহিনীর কাজই ছিল শত্রুব্যূহে ঢুকে তাঁদের গতিবিধির সমস্ত গোপন তথ্য সংগ্রহ করা। কিন্তু তার পাশাপাশি সরাসরি যুদ্ধে নেমে তাঁরা যেভাবে সাফল্য এনেছে তাকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই।
প্রমীলাবাহিনীর এই অসীমসাহসী বীরত্বের খবর ভিডিওবার্তায় প্রকাশ করেছে ইহুদি সেনা। মোট তিনটি পর্যায়ে ইরানের ‘ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর’-কে নিশানা করেন তাঁরা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী হিজবুল্লার মারণাস্ত্র লুকিয়ে রাখার জায়গা এবং তাদের একাধিক গোপন ডেরার সন্ধান পেয়েছিল প্রমীলাবাহিনী।
আরও শুনুন: যুদ্ধে যুদ্ধে ব্যস্ত ইজরায়েল, সেই দেশেরই প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা ছিল আইনস্টাইনের
এই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুলেছেন ২১ বছরের তরুণী তেহিলা। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা পায়ে হেঁটে ‘শত্রু এলাকা’য় ঢুকে শুরুতেই তাঁদের সমস্ত গুপ্ত ঘাঁটি খুঁজে বের করেন। সকলেই নিখুঁত সামরিক প্রস্তুতি নিয়ে তবেই সেদিকে রওয়ানা হয়েছিলেন। তেহিলা কিন্তু কোনও সাধারণ নারী নন। আইডিএফের ‘আইট’ ব্যাটালিয়নে কর্পোরাল পদের অধিকারী তিনি। তিনি আরও বলেছেন যে, তাঁরা সীমান্ত পেরিয়ে লেবাননের ভিতরে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত গিয়েছিলেন। এমনকী বাহিনীর পুরুষ সৈনিকরা এখনও যে এলাকাগুলির খোঁজ পায়নি, সেখানেও তাঁরা সদর্পে পৌঁছে যেতে পেরেছেন। তেহিলার মতো শেনিও আরেকটি কর্পোরাল পদে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা ট্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসা আগুনের ছবি থেকেই শত্রুদের গতিবিধি বুঝে ফেলেন। তবে শুধু শহর নয়, শহর ছেড়ে হিজবুল্লার যোদ্ধারা লেবাননের গ্রামগুলিতেও একাধিক ঘাঁটি তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। নারীবাহিনীর সংগ্রহ করা এই তথ্য হাতে পাওয়া মাত্র সক্রিয় ভূমিকা নেয় আইডিএফ। হিজবুল্লার সেই সমস্ত শত্রুশিবির নিশ্চিহ্ন করতে হেলিকপ্টার নিয়ে আক্রমণ নামে ইহুদি ফৌজ।
তবে ইহুদি নারীর যুদ্ধযাত্রার কাহিনি নতুন নয়। ইজরায়েলের আইন অনুযায়ী দেশের প্রতিটি নাগরিককে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে এতদিন মহিলা সেনাদের অন্যান্য বহু সাহসের গল্প শোনা গেলেও, এমন সরাসরি যুদ্ধজয়ের কথা কিন্তু সেভাবে সামনাসামনি আসেনি। তাই এবারের গল্পটা একেবারেই আলাদা। তবে গল্পের মতো শোনালেও এ কিন্তু আদৌ কোনও গল্প নয়। বরং বলা যায়, ইতিহাসের পাতায় এভাবেই নিজেদের নাম খোদাই করে রাখলেন ইহুদি বীরাঙ্গনারা।