প্রকৃতির নিয়মেই মাথায় চুল গজায়, আবার পড়ে। কারও ক্ষেত্রে আগেভাগেই মাথা সাফ। সমাজের চোখে এঁরা বিদ্রুপের পাত্র। অনায়াসে এঁদের নিয়ে হাসি-মজা করা যায়, মনে করেন অনেকেই। কিন্তু এমনটা করলে আইনত শাস্তিও হতে পারে! ঠিক কীভাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চুল নিয়ে যত চুলোচুলি! কারও মাথায় কালো কুচকুচে চুল, কেউ আবার তা রাঙিয়েছেন পছন্দের রঙে। কারও চুল কোঁকড়া, কারও নয়। কারও আবার সম্বল এক-মাথা টাকের দুঃখ। তো খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই সব ধরনের মানুষকে নিয়েই চালু আছে নানা কটূক্তি,ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ। রঙ্গ-তামাশা! চুল কম হলে ‘টাকলা’, চুল কোঁকড়ানো হলে ‘ম্যাগি’, সোজা হলে ‘পাটকাঠি’- উপমার অন্ত নেই। তবে সাধু সাবধান! এবার থেকে চুল নিয়ে কটূক্তি করলে পড়তে হতে পারে আইনি গেরোয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ঠেস দেওয়া কথাবার্তাকে কেউ পাত্তা দেন না। কেউ আবার ইয়ার্কি বলে উড়িয়ে দেন। তবে, ব্যঙ্গের দরুন কেউ যে মনে মনে আহত হন না, তা তো নয়। তবে এর প্রতিকারই বা কী? এই বিষয় নিয়ে কেউ কি আর আদালতে গিয়ে নালিশ ঠুকতে পারেন! আইনে কি সেরকম পরিসর আছে! সম্প্রতি আইনজ্ঞরা ভাবা শুরু করেছেন যে, এমন আইনের দরকার আছে। যার দরুন, কারও চুলের গঠন, দৈর্ঘ্য, রং বা স্টাইল নিয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ করলে অথবা কটূক্তি করলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের হতে পারে মামলা। কেন? কারণ এই তথাকথিত ইয়ার্কির মধ্যে আছে বৈষম্যের বীজ। নেহাত রসিকতা তা নয়। কেননা দেখা যায়, এই রসিকতা আসলে কোনও সম্প্রদায়কে ছোট করতে বা হীন প্রমাণ করতেই ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকী একজন ব্যক্তিমানুষকেও শারীরিক গঠনের জন্য বৈষম্যমূলক কোনও কথা বলা যায় না। তাহলে চুল নিয়েই বা হবে কেন? কেননা ঠাট্টার নাম দিয়ে যা করা হয় তা প্রকৃতপক্ষে মানবাধিকার লঙ্ঘন।
আর তাই আইন এনে এই বৈষম্যমূলক কটূক্তি বন্ধ করার ভাবনা ভাবছেন ফ্রান্সের আইন বিশেষজ্ঞরা। এই সংক্রান্ত একটি
বিল পেশ করার প্রসঙ্গও তুলেছেন তাঁরা। মূলত কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির অবসান ঘটাতেই এই পদক্ষেপ। সেলুনে চুল কাটতে গিয়ে অথবা কর্মক্ষেত্রে গিয়েও বহুসময় কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের কটূক্তির মুখোমুখি হতে হয়। সেই প্রবণতায় ইতি টানতেই এই আইনের ভাবনা।
আইনটি বলবৎ হতে হয়তো সময় লাগতে পারে। তবে, বৈষম্য দূরীকরণের এই নয়া আইন যে মানবাধিকার রক্ষায় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হয়ে বিশ্বকে পথ দেখাতে পারে, তা বলাই যায়।