আগুনের গ্রাসে বিধ্বস্ত ঝাঁসির মহারানি লক্ষ্মীবাঈ মেডিক্যাল কলেজের নিকু ওয়ার্ড, অর্থাৎ সদ্যোজাত বিভাগ। প্রাণ হারিয়েছে ১০ শিশু। বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আরও ১৬টি শিশু। আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে একাধিক শিশুকে বাঁচালেও, নিজেদের সন্তানকেই বাঁচাতে পারেননি মাহোবার বাসিন্দা কুলদীপ।
অন্যদের সন্তানদের বাঁচালাম, অথচ নিজের সন্তানকেই বাঁচাতে পারলাম না! বুকফাটা হাহাকারে ভেঙে পড়েছেন যোগীরাজ্যের দম্পতি। যে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে ঝাঁসির হাসপাতাল, সেই আগুনই কেড়ে নিয়েছে তাঁদের সদ্যোজাত সন্তানকে। আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে একাধিক শিশুকে তাঁরা বাঁচিয়েছেন বটে, তবে নিজেদের শিশুটিকে আর বাঁচাতে পারেননি। আর সেই আপশোশই তাড়া করে ফিরছে দম্পতিকে।
ঝাঁসির মহারানি লক্ষ্মীবাঈ মেডিক্যাল কলেজের নিকু ওয়ার্ড, অর্থাৎ সদ্যোজাত বিভাগটিই আগুনের কবলে পড়েছিল। এমনিতে ওই ওয়ার্ডে ১৮টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ওই ওয়ার্ডে ৪৭ সদ্যোজাতকে রাখা হয়েছিল, জানাচ্ছেন কানপুরের এডিজি। যাদের মধ্যে ১০ জন আগুনের গ্রাসে প্রাণ হারিয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আরও ১৬টি শিশু। দমকল পৌঁছনোর আগেই শিশু বিভাগের জানলা ভেঙে ৩৭ জন শিশুকে উদ্ধার করেন উপস্থিত কর্মী, রোগীর আত্মীয়রা। তাঁদের সঙ্গেই হাত লাগিয়েছিলেন মাহোবার বাসিন্দা কুলদীপ। আগুনের মধ্যে ছুটে গিয়েই তিন শিশুকে উদ্ধার করেছেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে আগুনে ঝলসে গিয়েছে তাঁর নিজের সন্তানই, সে কথা জানতে পারেননি কুলদীপ।
মাত্র দিন দশেক আগেই জন্ম হয়েছিল শিশুটির। রুটিন চেক-আপের জন্যই ঝাঁসি হাসপাতালে ভরতি করানো হয়েছিল তাকে। চিকিৎসকের আসার জন্য লবিতে অপেক্ষা করেছিলেন কুলদীপ ও তাঁর স্ত্রী। এর মধ্যেই হঠাৎ দেখা যায় আগুন লেগেছে। চারিদিক ধোঁয়ায় ধোঁয়া। সাতপাঁচ না ভেবেই সেদিকে ছুটে গিয়ে শিশুদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন কুলদীপ। তাঁর নিজের হাতও আগুনে ঝলসে যায়। কিন্তু নিজের সন্তানের কোনও খবর পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। যতক্ষণে সে খবর পান মা-বাবা, ততক্ষণে সে চলে গিয়েছে দুনিয়া ছেড়েই। অন্য শিশুদের বাঁচালেও, নিজের শিশুটিকেই যে উদ্ধার করতে পারেননি, এই আপশোশই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে সন্তানহারা মা-বাবাকে।