ছোটবেলার ট্রেন স্টেশন ছেড়েছে অনেকদিন। রিটার্ন টিকিট নেই। স্মৃতির গায়ে তবু ফেরার ডাক। সেইসব জমানো চিঠিতেই শোনো-র ডাকঘর। পড়ে-শুনে নিন।
প্রিয় ছোটবেলা,
বাঁধা গতে ‘প্রিয়’ সম্বোধনে চিঠি লিখতে বসলেও তুমি কি আদৌ আমার প্রিয় ছিলে? এই প্রাক্-মধ্যবয়সে সেইসব দিন যতই রঙিন আর উজ্জ্বল লাগুক না কেন, এটা তো সত্যি যে ছোটবেলার প্রতিটা দিন কেটেছে বড়বেলার জন্য অপেক্ষায়। মনে হত, কোনওভাবে বড় হতে পারলেই ব্যস! কেল্লা ফতে। সমস্ত ইচ্ছেপূরণের চাবিকাঠি যেন লুকিয়ে আছে সেই অদেখা রোমাঞ্চকর বড় হওয়ায়। তাহলে আজ কেন আবার সেই তোমাকে চিঠি লিখতে যাওয়া?
আমাদের সবার তো ছোটবেলা রঙিন ছিল না। কত শাসনে, দমনে, নিয়ন্ত্রণে, না পাওয়ায়, না বোঝায়, নিঃসঙ্গতায় কেটেছে দিনগুলো। তাই তো আজ জীবনের মধ্যভাগে এসেও ফেলে আসা দিনগুলোর মধুর স্মৃতিচারণায় মেতে উঠতে পারি না ট্রেন্ড মেনে। বিশ্বাস করি, এ কেবল আমার একার কথা নয়। বিশ্বাস করি, সব প্রাক্তন ছোটরাই ছোটবেলার সব কষ্টের কথা ভুলে কেবল আনন্দেসাগরে ভাসার কথা মনে করে রাখেনি।
তবে একটা কথা এখানে বলে রাখি, আজ তোমাকে কেমন অলীক মনে হয়। তুমি যখন আমার সঙ্গে ছিলে তখনকার সঙ্গে তুমি ছেড়ে যাওয়ার পরের আমার আকাশ-পাতাল ফারাক। নব্বইয়ের সেই সিপিয়া রঙের রোদ আর লোডশেডিংয়ে জ্বালানো হ্যারিকেনের আলোর মতোই মৃদু এক অনুভূতিতে মন ভরে যায় তোমার কথা ভাবলে। তুমি ছিলে তাই তো আজ আমি ‘আমি’ হতে পেরেছি। তোমায় ভুলে কি আমি একটা দিনও থাকতে পারি?
ছোটবেলা, ছেড়ে যাওয়া বন্ধু আমার, এখন যাদের কাছে আছ, তাদের বোলো এভাবেই যেন তোমায় মনে রাখে। বড় হয়ে গেলেও তোমায় ফিরে দেখার জন্য রং-বেরঙের চশমার দরকার না হয়।
ছোটবেলা, তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। ভালোবাসা নিও।
ইতি,
যে রোজ শুধু বড় হতে চেয়েছিল।