ছোটবেলার ট্রেন স্টেশন ছেড়েছে অনেকদিন। রিটার্ন টিকিট নেই। স্মৃতির গায়ে তবু ফেরার ডাক। সেইসব জমানো চিঠিতেই শোনো-র ডাকঘর। পড়ে-শুনে নিন।
শীতের শুরুতে শালওয়ালারা আসত, সবুজ সাইকেলে পসরা সাজিয়ে। আমাদের উঠোনে বিছিয়ে দিত সন্ত্রাসহীন কাশ্মীর। পাহাড়, উইলো গাছ, ঝিলম নদী, আপেলের বাগান। আশপাশের মা কাকিমারা ভিড় জমাত উপত্যকায় উঠে আসা ছেঁড়া মেঘেদের মতো। ঝুরো বরফ হয়ে ঢেকে দিতে চাইত গাছপালা, পাকদণ্ডী, ঘরবাড়ি আর ভালোবাসার উপত্যকা।
দু’বছর ধরে ধার শোধ করতে পারেনি যারা, তাকিয়ে থাকত বিষাদ-ক্ষত নিয়ে।
রানু জেঠিমা পশমিনা দেখত ছেলের বউয়ের জন্য। একখানা নিতে পারলে মন্দ হত না। তনু কাকিমার পশ্চিমি ঝঞ্ঝা। সে আসত না। তার মেয়ে পালিয়েছিল শালওয়ালার সঙ্গে। সেই যুবকের হৃদয় ছুঁয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল ঝরনার মতো। রাজুদাদার সব ঘোরা ছিল। পহেলগাঁও, বেতাব ভ্যালি, গুলমার্গ, শোনমার্গ আরও কত জায়গা!
মায়ের কাশ্মীর যাওয়া হয়নি। সংসার খরচ বাঁচিয়ে একবার ঘুরে এসেছিল কোপাই নদী, কঙ্কালিতলা, রবিঠাকুরের আশ্রম। লালমাটির দেশ ছাড়া মায়েদের আর কী ছিল তখন! খুব বেশি হলে দিঘা, পুরী। মধ্যবিত্তের বিদেশভ্রমণ আসেনি তখনও।
…তবুও শালওয়ালারা আসত। মনের গলিগলি ভরিয়ে তুলত আশা-নিরাশায়।