নীতি আর রাজনীতি তো সবসময় এক সরলরেখায় চলে না। আবার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দকে ছাপিয়ে নৈর্ব্যক্তিক নিরপেক্ষতাই বিচারপতির কাছে কাম্য। সব মিলিয়ে বিচারকের মনে দ্বন্দ্ব জেগে ওঠা অবশ্যম্ভাবী। এমন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত বিচারকের? সে কথাই বাতলে দিয়েছিলেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়-এর বাবা ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়।
বিচারপতির আসনে বসে যদি নিজের নীতি নৈতিকতার সঙ্গে আপস করতে হয়? কী করবেন তখন? সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার আগেই বাবার থেকে সে পরামর্শ পেয়েছিলেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন দু’বছর। তার আগে থেকেই অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে যুক্ত চন্দ্রচূড়। আর এই সময়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর মামলা শুনেছেন তিনি। শবরীমালা থেকে তিন তালাক থেকে রামমন্দির মামলা, কী নেই সে তালিকায়! এই সমস্ত মামলাই দেশের রাজনীতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। ফলে রায়দানের ক্ষেত্রেও তার আঁচ এসে পড়ে বইকি। আর সেখানেই বিচারকের মনে দ্বন্দ্ব জেগে ওঠা অবশ্যম্ভাবী। নীতি আর রাজনীতি তো সবসময় এক সরলরেখায় চলে না। আবার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দকে ছাপিয়ে নৈর্ব্যক্তিক নিরপেক্ষতাই বিচারপতির কাছে কাম্য। সব মিলিয়ে প্রধান বিচারপতির ভূমিকায় দ্বন্দ্ব সবসময়ই এজলাসে হাজির। এমন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত বিচারকের? সে কথাই বাতলে দিয়েছিলেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়-এর বাবা ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়। যিনি নিজেও একসময় দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব সামলেছেন।
চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, তাঁর বাবা পুনে শহরে একটি ছোট্ট ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। তা জেনে চন্দ্রচূড় অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন, আমরা আবার পুনে-তে কবে থাকতে যাব? ওখানে ফ্ল্যাট কেনার কারণ কী? সিনিয়র চন্দ্রচূড় শান্ত গলায় উত্তর দেন, “আমি জানি যা আমি কোনও দিনই ওখানে থাকতে যাব না। এমনকি আমি কতদিন তোমার সঙ্গে আছি তাও জানি না। তবে তুমি একটা কাজ কোরো, বিচারপতি হিসেবে তোমার যতদিন মেয়াদ, ততদিন এই ফ্ল্যাট রেখে দিও।” এহেন নির্দেশ শুনে চন্দ্রচূড় আরোই অবাক হয়ে যান। তখন সিনিয়র চন্দ্রচূড় ব্যাখ্যা করে বলেন, যদি কখনও এমন পরিস্থিতি আসে, মনে হয় যে নিজের নৈতিক আর বৌদ্ধিক আদর্শের সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে, তখন যেন সেখান থেকে সরে আসার সুযোগ থাকে। আসলে পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে আপস করতে বাধ্য হন। কিন্তু সেই কারণে, জীবনধারণের তাগিদে যেন সন্তানকে আপসের পথে না হাঁটতে হয়, সে কথাই সেদিন নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন চন্দ্রচূড়ের বাবা। তিনি ছেলেকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, “জেনো তোমার মাথার উপরে একটা ছাদ আছে। না আইনজীবী হিসেবে, না বিচারপতি হিসেবে, কখনোই নিজেকে আপসের পথে নিয়ে যেও না।”
বিদায়ের মুখে বাবার সেই কথাই মনে করেছেন চন্দ্রচূড়। তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, বিচারপতি হিসেবেও সমস্ত অন্যায়ের প্রতিকার করা যায় না। সেই না-পারার নেপথ্যে দাঁড়িয়ে থাকে কিছু বাস্তব পরিস্থিতি, আইনের কিছু বিধিনিষেধ। সেও একরকমের মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়াই। তবুও, নিজের মনের কাছে যে আপস করতে নেই, বাবার কাছে সে শিক্ষাই পেয়েছিলেন দেশের শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি।