একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে চিকিৎসাজগৎ তোলপাড়। সেই তালিকায় এবার নয়া সংযোজন। বাড়িতেই এক মহিলার হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের ছল ভুয়ো ডাক্তারের, আর সেই সুবাদে ৭ লক্ষ টাকার বেশি হাতিয়ে নিল সে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কাদম্বিনী গাঙ্গুলি যখন ডাক্তারি পাশ করেন, সে সময়ে এ দেশের মেয়েদের অনেকেরই অন্তঃপুরের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরে আসা মানা। কোনও রোগের বাড়াবাড়ি হলে নেহাত যদি ডাক্তার কবিরাজ দেখাতেই হয়, তবে ডাক্তারকেই যেতে হত রোগিণীর কাছে, ঘরের মধ্যে। সন্তান প্রসবের মতো জটিল ব্যাপারও বাড়িতেই সারা হত। কিন্তু সেসব দিন তো অনেক পিছনে ফেলে এসেছি আমরা। এখন অসুখ সারানোর জন্য ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়াই সাধারণ নিয়ম। আর বড়সড় কোনও অস্ত্রোপচার করতে হলে তো হাসপাতাল-নার্সিংহোমের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া গতি নেই। তবে এই পরিবার সেসবের ধার মাড়ায়নি। বরং বাড়িতেই এক বৃদ্ধা মহিলার হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের জোগাড় করেছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, তাতে না সারল রোগ, উলটে গচ্চা গেল ৭ লক্ষ টাকারও বেশি। কেন-না ডাক্তারটিই যে ভুয়ো!
এমনিতে চিকিৎসার কাজটি যতই মহৎ হোক না কেন, সেই আড়াল নিয়ে এই দুনিয়ায় কম দুর্নীতি চলে না। অসুস্থ হলে মানুষ একরকম অসহায় হয়েই পড়ে, আর সেই মানসিকতার সুযোগ নিয়েই বহু ভণ্ড লোক তাদের স্বার্থসিদ্ধি করে চলে। ভুয়ো ডাক্তার, ভুয়ো ওষুধ, নার্সিংহোমে দালাল কিংবা বাড়তি বিলের চক্কর, এ সবই আমাদের কমবেশি জানা। বাড়িতে অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে আসলে তেমনই এক চক্রের শিকার হয়েছে মুম্বাইয়ের ওই পরিবারটি।
পরিবারের তরফে যিনি এই প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন, তিনি জানান, তাঁর মায়ের বয়স ৭০-এর বেশি। বছর তিনেক আগে এক ডেন্টাল ক্লিনিকে বৃদ্ধার সঙ্গে এক ব্যক্তির দেখা হয়। বৃদ্ধার হাঁটুতে ব্যথার কথা শুনে সে তাঁকে এক ডাক্তারের কথা বলে। যিনি নাকি বাড়িতেই অস্ত্রোপচার করে ব্যথা সারিয়ে দেন। সেই শুনে ওই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৃদ্ধার পরিবার। জানা যাচ্ছে, ‘ডাক্তার’ বলে পরিচয় দেওয়া সেই ব্যক্তি বাড়িতে এসে কার্যত তুকতাক করে। মহিলার দুই হাঁটু কেটে সেখান থেকে রক্তরস বের করে, তা কাগজে রেখে, তার উপরে হলুদ দিয়ে শেষে কাগজটি পুড়িয়ে ফেলা হয়। একাধিকবার এই প্রক্রিয়া করে ওই ব্যক্তি জানায়, এর ফলেই ব্যথার উপশম হবে। বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসেবে নগদে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নেয় ওই ব্যক্তি।
বলাই বাহুল্য, এরপরে ব্যথা সারার কোনও লক্ষণ দেখেননি মহিলা। না ডাক্তার, না যোগাযোগের নম্বর দেওয়া ব্যক্তিটি, কারও সঙ্গে ফোনে আর যোগাযোগও করতে পারেনি পরিবারটি। এর বেশ কিছুদিন পর খবরের কাগজে এমনই আরেকটি ঘটনার সন্ধান পায় ওই পরিবার। সেখানেও একই উপায়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতারণার দায়ে ওই ডাক্তারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এইসব দেখে শেষমেশ মুম্বাই পুলিশের দ্বারস্থ হয় এই পরিবারটিও। তদন্ত চালিয়ে দুই অভিযুক্তকেই আটক করেছে মুম্বাই পুলিশ। কোনও একটি বা দুটি পরিবারের থেকে টাকা হাতানো নয়, এরা গোটা একটি প্রতারণা চক্র চালাত বলেই মনে করছে পুলিশ।