বিদ্যুতের তার ছুঁলে যেমন শক লাগে, গাছের পাতা ছুঁলেও সেই একই অনুভূতি হতে পারে? হ্যাঁ, হতে পারে বইকি। অন্তত এই বিশেষ গাছটির ক্ষেত্রে সে কথা একেবারেই সত্যি। জানেন কি ‘সুইসাইড প্ল্যান্ট’-এর কথা?
একটি গাছ মানেই একটি প্রাণ, এ কথাই বলি আমরা। কিন্তু এমন গাছও আছে, যে প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। তেমনই এক গাছ, যার নাম সুইসাইড ট্রি। এ গাছ ছুঁলে যে ভয়ংকর যন্ত্রণা হয়, তা নাকি মরে যাওয়ার মতোই। আত্মহত্যা করে সে জ্বালা জুড়িয়েছেন কেউ, এমন ঘটনাও বিরল নয়। আর সেইসব ঘটনার জেরেই এ গাছের নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে আত্মহত্যা শব্দ।
জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতির সময় এক সেনাকর্মী সিরিল ব্রোমলে এই গাছের উপর পড়ে গিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সাপে কাটার মতো ছটফট করছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের বিছানায় বেঁধে রাখতে হয় তাঁকে। ব্রোমলে-ই জানিয়েছিলেন আরও এক সেনা অফিসারের কথা, যিনি টয়লেট পেপার হিসাবে এই গাছের পাতা ব্যবহার করেছিলেন। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। আর্নি রাইডার নামে এক উদ্ভিদবিদের কথাও জানা যায়, এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে যাঁর দুটি বছর লেগেছিল।
কী ভাবছেন? আজগুবি নয়, একেবারেই সত্যি কথা। অস্ট্রেলিয়ার রেন ফরেস্টে রয়েছে এই বিশেষ ধরনের গাছ, যা নিমেষে কেড়ে নিতে পারে প্রাণ। বটানির দুনিয়ার এ গাছের নাম নাম জিম্পি জিম্পি। কয়েক বছর আগে আবিষ্কার হওয়া এই গাছ আজও বিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার বিষয়। উদ্ভিদবিদেরা বলেন, এ গাছ ছুঁলে নাকি একইসঙ্গে অ্যাসিডে জ্বলে যাওয়া এবং ইলেকট্রিক শক লাগার মতো মারাত্মক যন্ত্রণা হয়। এমনকি ছোঁয়ারও প্রয়োজন নেই, গাছের কাছাকাছি গেলেই এ কাণ্ড ঘটতে পারে। আসলে গোটা গাছ জুড়ে রয়েছে অসংখ্য বিষাক্ত কাঁটা। এমনকি প্রাণীদের আকৃষ্ট করার জন্যে এ গাছ যে ফল উৎপাদন করে, তার গা জুড়েও থাকে এই সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কাঁটা। গরমের সময় আবার বিড়ালের মতো তারা নিজেদের ঢেকে রাখে। ফলে গাছের কাছে দাঁড়ালেই সেই কাঁটার খোঁচা খাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে এ খোঁচা তো আর যে কোনোরকম খোঁচা নয়। তার মাধ্যমেই শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে ভয়ানক বিষ। সে বিষের কোনও প্রতিষেধক নেই। তার চেয়েও বড় কথা, শরীরে যে কাঁটা ফুটেছে, তা এতটাই সূক্ষ্ম যে তুলে ফেলাও সহজ নয়। এদিকে এই কাঁটা শরীরের মধ্যে দীর্ঘদিন বসত করতে পারে, ফলে জ্বালাযন্ত্রণা কমার উপায় নেই। গবেষকেরা দেখেছেন, একশো বছরের শুকনো পাতার মধ্যেও কাঁটাগুলি দিব্যি স্বমহিমায় জেগে আছে।
যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন, পাখি-পোকাদের এ গাছে সমস্যা হতে দেখা যায়নি। মানুষ, কুকুর, ঘোড়া- যারা এ বনের বাসিন্দা নয়, তারাই এই গাছের শিকার হয়েছে। কে জানে, এই আক্রমণ হয়তো মানুষের সর্বত্র অনুপ্রবেশ আর দখলদারির বিরুদ্ধেই প্রকৃতির প্রতিবাদ।