সিরিয়াল নয়, মন্দিরের নাম ‘সাস-বহু’। প্রতিদিন সেই মন্দিরে পুজো হয়। ভক্তরা দলে দলে ভিড় জমান। কিন্তু এমন নাম কেন? মন্দির তৈরির নেপথ্যে থাকা কাহিনিই বা কেমন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মন্দিরের নামেও শাশুড়ি-বউমার উল্লেখ। তবে এক্ষেত্রে ঝগড়ার বালাই নেই। রয়েছে স্রেফ ভালোবাসা। নিখাদ প্রেম মিশিয়েই তৈরি হয়েছে মন্দির। স্থানীয় বিশ্বাস, মন্দির তৈরির সঙ্গে সত্যি সত্যিই এক শাশুড়ি-বউমার নাম জড়িয়ে। তবে মন্দিরে মূর্তি হিসেবে তাঁরা নেই। রয়েছেন, বিষ্ণু এবং শিব।
এ দেশে মন্দিরের কমতি নেই। প্রচলিত দেবদেবী তো বটেই, মন্দির রয়েছে দুরাচারী অসুরেরও। রাবণ, দুর্যোধন, শকুনি কিংবা মহিষাসুর মন্দিরের কথা অনেকেই শুনেছেন। এমনকি পিঁপড়ের জন্যও মন্দির রয়েছে এই দেশে। সেই তালিকায় শাশুড়ি-বউমার নামে মন্দির থাকাও আশ্চর্যের নয়। রাজস্থানের উদয়পুরের কাছে নাগডা গ্রাম। সেখানেই এই মন্দিরের দেখা মেলে। কারুকাজ দেখলে মন্দিরের প্রাচীনত্ব বোঝা যায়। গঠনশৈলীও বেশ অন্যরকম। ইতিহাস বলে, এই মন্দির তৈরি হয়েছিল ১১ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে। নির্মাণ করেছিলেন রাজা মহীপাল। স্থানীয় বিশ্বাস, রাজার স্ত্রী ছিলেন বিষ্ণু ভক্ত। তাঁর জন্যই এই মন্দির গড়ে দেন রাজা। আবার রাজার মৃত্যুর পর এই মন্দিরের পাশেই আরেকটি মন্দির গড়েন তাঁর ছেলে। তবে সেই মন্দির ছিল ভগবান শিবের। আশ্চর্যের বিষয়, এই শিবমন্দির রাজপুত্র তৈরি করেছিলেন তাঁর স্ত্রী-র জন্য। অর্থাৎ পাশাপাশি দুই মন্দির, যা তৈরি হয়েছে শাশুড়ি এবং বউমার জন্য। সেই থেকেই মন্দিরের এমন নাম। যদিও এমনটা প্রচলিত ধারণা। মন্দিরের এমন নাম হওয়ার নেপথ্যে আরও একটা কারণ পাওয়া যায়। অনেকে বলেন, প্রথমে তৈরি হওয়া বিষ্ণু মন্দিরের নাম রাখা হয় ‘সহশ্রবাহু’ মন্দির। পরবর্তীকালে নাম লোকমুখে সাসবহু হয়ে গিয়েছে। স্থানীয়রা এই মন্দিরকে জাগ্রত বলেই মনে করেন। তাই প্রতিদিন সেখানে পুজো দিতে যান অনেকে। বাইরে থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও এখানে একবার করে ঢুঁ মেরে যান। তা যে শুধুমাত্র, মন্দিরের অদ্ভুত নামের জন্য এমনটা নয়। বরং মন্দিরের গঠনশৈলী মুগ্ধ হয়ে দেখেন পর্যটকরা।
বর্তমানে এই মন্দিরের পাশে আরও মন্দির তৈরি হয়েছে। ব্রহ্মা, সরস্বতী সহ আরও কিছু দেবদেবীর বিগ্রহ রয়েছে সেখানে। তবে বিষ্ণু মন্দিরটি সবার সামনে। দেখেই বোঝা যায় এটি প্রথমে তৈরি। আকারেও অন্য সবকটি মন্দিরের থেকে এটি বড়। সেই নিয়ে অনেকে রসিকতাও করেন। যেহেতু শাশুড়ির জন্য তৈরি মন্দির, তাই আকারে বড়, এমনটাই বলেন সকলে। মন্দিরটিতে মোট ৪ টি দরজা রয়েছে। শেষ দরজার ওপারে কী রয়েছে তা জানার অধিকার নেই কারও। অনেকে বলেন, এখানে গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছেন রাজা। বাকি মন্দিরগুলি সাধারণ। আকারেও অনেকটাই ছোট। বছরের নির্দিষ্ট কিছু দিনে মন্দিরে বিশেষ পুজোর আয়োজন হয়। তাছাড়া নিত্যপুজোর ব্যবস্থা থাকে রোজ। সবমিলিয়ে এই মন্দিরে নামের জন্য বেশ জনপ্রিয় অনেকে কাছেই।