কালীমূর্তি। কিন্তু দেখে মনে হবে যেন স্বয়ং জগন্নাথ দাঁড়িয়ে। প্রথমবার দেখলে যে কেউ চমকে উঠবেন। পুরীর মন্দিরের অদূরেই এই দেবীর আরাধনা স্থল। কোন মন্দিরের কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কৃষ্ণকায় মূর্তি। বড় বড় চোখ। মুখের চারদিকে নকশা। প্রথমবার দেখে মনে হবে জগন্নাথ। কিন্তু না, এই মূর্তি দেবী দক্ষিণাকালীর। পুরীর এক মন্দিরে দেবী পূজিতা। কেবল ওই একটি মূর্তি নয়, পুরীর বিভিন্ন মন্দিরের কালী বিগ্রহে জগন্নাথের মিল ধরা পড়ে। তবে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বীরগোবিন্দিপুরের কালী বিগ্রহ।
লীলাবিলাসে তিনি গনধর্মের গণদেবতা। কখনও কালী, কখনও শিব আবার কখনও গণেশ রূপে তাঁর প্রকাশ। কথিত আছে, ভক্ত তাঁকে যে রূপে কল্পনা করবে, সেই রূপেই ধরা দেবেন প্রভু জগন্নাথ। তাই কালী রূপে জগন্নাথকে কল্পনা করা যেতেই পারে। প্রতিবছর কালী পুজোর সময় ওড়িশায় এমনই কিছু মূর্তি দেখা যায়। যা হুবহু জগন্নাথের মতোই দেখতে। পুরীর বীরগোবিন্দপুরের দক্ষিণাকালী মন্দিরটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। সারাবছর মন্দিরে থাকে দেবীর কাঠামো। তাতেই পুজো হয়।
কার্তিক অমাবস্যায় ঘটা করে আয়োজন হয় বার্ষিক পুজোর। তখন মূর্তি আসে মন্দিরে। আর সেই মূর্তিই হয় চমকে দেওয়ার মতো। এ যেন স্বয়ং জগন্নাথ এসেছেন কালী মন্দিরে! তফাৎ বলতে লোলজিহ্বা। মূর্তির চারতটি হাত। তাতে কালীর অস্ত্রই রয়েছে। পদতলে শায়িত মহাদেব। গলায় মূণ্ডমালা। সম্পূর্ণ মূর্তি দেখলে কালী বিগ্রহই মনে হবে। তবে দেবীর মুখ শরীরের তুলনায় অনেকটা বড়। আর সেখানে যেভাবে চোখ, নাক বা ঠোঁটের আকার রাখা হয়, তা দেখেই মনে হবে এই মূর্তি জগন্নাথের।
জগন্নাথের সঙ্গে দক্ষিণাকালীর যোগ মেলে শাস্ত্রেও। কালিকাপুরাণ সহ একাধিক পাঠে সেই যোগ স্পষ্ট হয়েছে। এমনকি বীজ মন্ত্রেও কালীকেই জগন্নাথের সঙ্গে এক সুতোয় বাঁধা হয়েছে। যদিও স্রেফ জগন্নাথ নন, তন্ত্রে বলরামের উগ্রতারা এবং সুভদ্রার সঙ্গে ভুবনেশ্বরীর যোগও স্পষ্ট। বীরগোবিন্দপুরের দক্ষিণাকালী মূর্তিও সেখান থেকে অনুপ্রাণিত, এমনটা মনে করেন কেউ কেউ। তবে শাস্ত্রে এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। আসলে, জগন্নাথ যেমন জগতের নাথ, কালীও তেমনই মহাবিদ্যার অংশ। কালের নিয়ন্ত্রক তিনি। সুতরাং কালী এবং জগন্নাথ মিলেমিশে একাকার হলে তাতে ভুল নেই কিছু। তবে পুজোর ধরনে কোনও মিল নেই একথা বলাই বাহুল্য। জগন্নাথ যেমন পূজিত হন সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে, দক্ষিণাকালীর পুজো হয়য় শাক্তমতে। পুজোর নিয়মও আলাদা। প্রতিবছর কালীপুজো উপলক্ষে এই মন্দিরে ভিড় জমে হাজার হাজার ভক্তের। ওই এলাকার আরও অনেক মূর্তিতেই জগন্নাথের মিল ধরা পড়ে।
বিসর্জনের সময় মূর্তিগুলি পাশাপাশি থাকলে সেই সাদৃশ্য আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। কথিত আছে, এই দেবীর পুজো করলে তুষ্ট হন স্বয়ং জগন্নাথ। তাই পুরী তো বটেই, বাইরে থেকেই ভক্তরা কালীপুজোর সময় মন্দিরে ভিড় জমান। এছাড়া সারাবছর যে ভক্তরা পুরীর মন্দিরে পুজো দিতে যান, তাঁরাও সময় করে ঘুরে আসেন বীরগোবিন্দপুরের মন্দির থেকে।
চিত্রঋণ- ইন্টারনেট