কেবল শিল্প-বাণিজ্যে নয়, আসলে ভালোবাসায় পুঁজি জমিয়েছিলেন রতন টাটা। আর যাওয়ার বেলাতেও সেই পুঁজি রেখেই গেলেন তিনি। কাছের মানুষ থেকে পোষ্যরা, সকলেই যার শরিক। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
শিল্পপতি বটে, কিন্তু মানুষের মনে থাকার মতো মানুষ। শিল্পের লাভ-লোকসানে নয়, ভালোবাসার বিনিয়োগে সেই স্থান অর্জন করেছিলেন রতন টাটা। টাটা গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর তিনি। কিন্তু সারাজীবন ধরেই রতন টাটা বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেবল ব্যবসার হিসেবনিকেশে রতন টাটার সমস্ত স্কোরশিট ধরা যাবে না। সারাজীবন ধরেই, টাটা গোষ্ঠীর লাভ-লোকসানের যাবতীয় হিসেবের বাইরে, মানুষ হিসেবে নিজের একক পরিচয়টিও গড়ে চলেছিলেন রতন টাটা। কেমন সে পরিচয়? নানা শ্রেণির মানুষ থেকে অবোলা পশুরা সে কথা জানে। মৃত্যুর পরেও সে পরিচয় অটুট রইল তাঁর। দেখা গেল, নিজের সম্পত্তির ভাগবাঁটোয়ারার সময় পোষ্যদের কথা পর্যন্ত ভোলেননি তিনি। ভোলেননি তাঁর জন্য কাজ করে যাওয়া নিপাট সাধারণ মানুষটিকেও। রতন টাটার ১০ হাজার কোটির উইলে কার ভাগ কতটুকু?
রতন টাটার সারমেয় প্রেম কারও অজানা নয়। মুম্বইয়ের মহালক্ষ্মীতে পশুদের জন্য একটি হাসপাতাল খোলেন তিনি। নিরাশ্রয়, না-খেতে পাওয়া পশুদের জন্য প্রাণ কাঁদত তাঁর। তাঁর একলা জীবনে পোষ্যরাই ছিল সবচেয়ে কাছের সঙ্গী। প্রিয় কুকুরটি অসুস্থ বলে খোদ বাকিংহাম প্যালেসে প্রিন্স চার্লসের সম্মানের ডাক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেই রতন টাটা তাঁর উইলে উল্লেখ রাখলেন তাঁর পোষ্য জার্মান শেফার্ড, ‘টিটো’-র। প্রায় ৬ বছর আগে তিনি এই কুকুরটিকে দত্তক নিয়েছিলেন। এখন থেকে তার দেখাশোনা করবেন টাটার দীর্ঘদিনের পাচক রাজন শ’। ‘টিটো’-র নামে সম্পত্তির অংশ রেখে রতন টাটার নির্দেশ, সে যেন অপরিমেয় যত্ন-আত্তি পায়। সেই যত্নের জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তার জোগান দেবে টিটোর নামে থাকা ওই অংশ।
আলিবাগের সমুদ্রসৈকতে ২০০০ বর্গফুটের বাংলো, জুহুতে দোতলা বাড়ি ছাড়াও, ৩৫০ কোটি টাকার বেশি ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে টাটার নামে। উপরন্তু ১৬৫ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তির টাটা সন্স-এ যে সামান্য শেয়ার রয়েছে তাঁর, তারও অর্থমূল্য কম নয়। সব মিলিয়ে রতন টাটার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা। উইল মোতাবেক সেই সম্পত্তির ভাগ পেয়েছেন ভাই জিমি, সৎ বোন শিরিন এবং দিনা। বাবুর্চি রাজন-এর পাশাপাশি বাটলার সুব্বাইয়া-র জন্যও অর্থ বরাদ্দ করেছেন রতন টাটা। ভোলেননি ছায়াসঙ্গী শান্তনুকে। তাঁকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য যে শিক্ষাঋণ দিয়েছিলেন, তা মকুব করেছেন। শান্তনু ও রতন টাটার যৌথ মালিকানার সংস্থা ‘গুডফেলোজ’-এর সমস্ত স্বত্বই শান্তনুকে দিয়ে গিয়েছেন তিনি। আর টাটা সন্স-এর শেয়ার গিয়েছে তাঁর দাতব্য সংস্থার কাছে।
তবে, কাছের মানুষ বা আত্মীয়দের সম্পত্তির ভাগীদার করা তো স্বাভাবিকই। সারাজীবন ধরে নানারকম হিতকাজে যিনি জড়িয়ে রেখেছিলেন, সেই রতন টাটার পক্ষে দাতব্য সংস্থার কথা উইলে উল্লেখ করাও আশ্চর্যের নয়। কিন্তু পোষ্যকে সম্পত্তির শরিক করা এ দেশে এখনও চট করে চোখে পড়ে না। আর সেই নজিরবিহীন কাজটি করেই আরও একবার ব্যতিক্রম হয়ে থাকলেন রতন টাটা।