দ্বন্দ্ব পিছনে ফেলে এক দেশের তীর্থযাত্রীদের জন্য দরজা খুলে দিল অন্য দেশ। পাকিস্তানের তীর্থে যাওয়ার অনুমতি মিলল ভারতের বাসিন্দাদের। তাহলে এবার কি ক্রিকেট-যোগেও মিলবে দুই দেশ? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
আগামী আরও ৫ বছরের জন্য ভিসা ছাড়াই কর্তারপুর সাহিব তীর্থক্ষেত্রে পা রাখতে পারবেন ভারতের বাসিন্দারা। চুক্তিতে সম্মতি দিল পাকিস্তান। যাবতীয় দ্বন্দ্ব-বিবাদের মধ্যেও যেন সামান্য খুলে গেল সমন্বয়ের দরজা। তাহলে কি এবার দুই দেশের ক্রিকেটের দরজাও খুলবে? আশা খুঁজছেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা।
যুদ্ধ আর বিবাদের অশান্তি কোন সাধারণ মানুষই বা মন থেকে চান? শান্তিতে নিজের ঘরের কোণে চারটি অন্ন জুটে গেলেই উপমহাদেশের একটা বড় অংশের মানুষ নিজেদের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেন। কিন্তু রাজনীতির চাল তো মানুষের মন বোঝে না, নিজের নিজের স্বার্থ বোঝে। সেই স্বার্থে কখনও দেশভাগ হয়, কখনও ভাগ হয়ে যাওয়া দেশ সেই ভাঙনের ক্ষতে আরও আঘাত শানায়। ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সেই সম্পর্কের বয়ান লেখা হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু কখনও কখনও তো সে গল্প বদলেও যায়। যেমনটা ঘটেছিল বছর পাঁচেক আগে, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে দুই দেশের মধ্যে কর্তারপুর চুক্তি সম্পাদনের সময়।
আসলে কর্তারপুর সাহিবে শিখ ধর্মগুরু গুরু নানক জীবনের শেষ ১৮ বছর কাটিয়েছিলেন। ফলে শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষেরা কর্তারপুর সাহিবকে পবিত্র তীর্থক্ষেত্র বলে মানেন। কিন্তু ৪৭-এর দেশভাগের সময় অধিকাংশ শিখ এ দেশে থেকে গেলেও, পাকিস্তানের পাঞ্জাব অংশে পড়ে কর্তারপুর সাহিব। তারপর থেকেই ভারতীয় শিখদের আর্জি ছিল, এই তীর্থক্ষেত্রে সহজে যাওয়ার ব্যবস্থা করুক সরকার। সেইমতো ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে পাক সরকারের সঙ্গে কর্তারপুর করিডর চুক্তি সম্পন্ন করে ভারত সরকার। যার মাধ্যমে ৪ কিমি রাস্তা পার করে ভারত থেকে পাকিস্তানের কর্তারপুরে যেতে পারেন শিখ তীর্থযাত্রীরা। এর জন্য ভারতীয় শিখদের কোনওরকম ভিসা লাগে না। ৫ বছরের জন্য সম্পন্ন হওয়া সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি মাসেই। তবে তার আগেই বিদেশমন্ত্রী জয়শংকরের পাকিস্তান সফরের পর আরও ৫ বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ল কর্তারপুর করিডর চুক্তির।
এ প্রসঙ্গে এ কথাও উল্লেখযোগ্য যে, পাক তীর্থযাত্রীদের জন্য সম্প্রতি দরজা খুলে দিয়েছে ভারতও। খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার বার্ষিক উরস অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য অন্তত ৮২ জন পাকিস্তানির ভিসা মঞ্জুর করেছে ভারতীয় দূতাবাস। ওয়াগা সীমান্ত পেরিয়ে ইতিমধ্যেই ভারতে প্রবেশ করেছেন ওই তীর্থযাত্রীরা।
ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সবসময়েই যে যুযুধান মনোভাব থাকে, তার প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপকে স্বস্তির না বলে উপায় নেই। আর সেখান থেকেই অন্যদিকেও আশা দেখতে চাইছেন অনেকেই। ক্রিকেটে ভারত-পাক ম্যাচ মানে সবসময়েই বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ছোটে। কিন্তু রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণেই, পাকিস্তানের মাটিতে মেন ইন ব্লু-কে দেখার আশা সুদূরপরাহত। এর আগে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের খেলতে যাওয়ার কথা ছিল বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষ ভেন্যু শ্রীলঙ্কায় বসেছিল খেলার আসর। আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেই বিরোধ ঘুচে পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখবে কি টিম ইন্ডিয়া? ধর্মের যোগে যখন দুই দেশ সমন্বয়ের বার্তা দিল, তাহলে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ধর্ম ক্রিকেটেও কি সেই যোগ বয়ে আনা যাবে? সেই প্রশ্নেরই এবার উত্তর খোঁজার পালা।