ঘুষ দিতে হবে। তাও আবার ১৫ কোটি টাকা। নাহলে ব্যবসা করা যাবে না। এমন শর্ত শুনতে হয়েছিল রতন টাটাকেও। শিল্পপতির মৃত্যুর পর নতুন করে চর্চায় ফিরেছে সেই প্রসঙ্গ। ঘুষের প্রস্তাব পেয়ে কী করেছিলেন টাটা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কোনও শিল্পপতির প্রয়াণে দেশজোড়া বিষাদের ছায়া, এমনটা এ দেশ কবে দেখেছে জানে না। রতন টাটা কিন্তু সেই ভালোবাসা কুড়িয়ে নিয়েছেন তাঁর যাবার কালে। নতুন করে চর্চায় ফিরেছে তাঁর জীবনের নানা ঘটনা। সেই সুবাদে উঠে এসেছে রতন টাটার এক পুরনো ইন্টারভিউ।
আরও শুনুন:
ভুলই যখন ঠিক! বলেননি রতন টাটা, তবু ‘ভুল’ ভেবেই জীবন বদলে যায় মায়াঙ্কের
শিল্পজগত বলছে, নক্ষত্রপতন। একেবারে আমজনতার মধ্যে থেকেও উঠে আসছে দীর্ঘশ্বাস। একই মানুষের জন্য। তিনি রতন টাটা। টাটা গোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর তিনিই। কিন্তু কেবল ব্যবসার হিসেবে তাঁকে ধরা যায় না। সারাজীবন ধরেই, টাটা গোষ্ঠীর লাভ-লোকসানের যাবতীয় হিসেবের বাইরে, মানুষ হিসেবে নিজের একক পরিচয়টিও গড়ে চলেছিলেন রতন টাটা। প্রকৃত অর্থে সততা ছিল তাঁর জীবনের পরম ধর্ম। একবার নয়, বারবার তাঁর কর্মকাণ্ড সেই পরিচয় দিয়েছে। শিল্পপতি হিসেবে কম সম্পত্তির মালিক ছিলেন না। তবে সবটাই যে কষ্টার্জিত সৎপথের রোজগার, তা দাবি করতেন রতন টাটা স্বয়ং। তাই বলে অসৎ পথে পা রাখার প্রলোভনও কম পাননি। সম্প্রতি তাঁর যে পুরনো ইন্টারভিউ-এর ভিডিও চর্চায় উঠে এসেছে, সেখানেই ধরা পড়েছে সেই প্রসঙ্গ।
আরও শুনুন:
এনেছিলেন ‘স্বপ্নের’ ন্যানো গাড়ি, এতদিনে তার কারণ খোলসা করলেন রতন টাটা
২০১০ সালে জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন রতন টাটা। শিল্প মহলে অবৈধ কাজ নতুন কিছু নয়। তাতে রাজনিতিকদের মদতও থাকে যথেষ্টই। প্রমাণ না থাক, আড়ালে আবডালে এমন অনেক চুক্তি পাকা হয়, যা সঠিক পথে হওয়া সম্ভব ছিল না। তার পরিণতিও অনেক সময় মারাত্মক হয়। নেপথ্যে চলে টাকার খেলা। কোটি কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ কাজ করেন কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতা। এমনই এক নেতাকে, থুড়ি যে সময়ের কথা হচ্ছে তখন তিনি নামকরা মন্ত্রী, তাঁকে ১৫ কোটি ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব পান রতন টাটা। বিশেষ এক কাজে সাহায্য করবেন ওই মন্ত্রী। কেউ জানতেও পারবে না কিছু। স্রেফ সময়মতো টাকাটা দিয়ে দিতে হবে। প্রস্তাব এসেছিল অন্য এক শিল্পপতি মারফত। এঁদের কারও নাম প্রকাশ্যে বলেননি রতন টাটা। স্রেফ ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। এমনকি শিল্পপতির বন্ধু বারবার ঘুষ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, এ কথাও সর্বসমক্ষে জানান টাটা। কিন্তু সেই পথে তিনি এক পা-ও রাখেননি। ঘুষ দেওয়া দূরে থাক, বিষয়টি নিয়ে কোনও কথাই এগোননি। তাতে লাভ না হোক, তাঁর কোনও ক্ষতিও হয়নি। বরং দিনের শেষে নিজের সততা বজায় রাখতে পেরে শান্তিতে ঘুমিয়েছিলেন বলে দাবি করেন টাটা। তাঁর কথায়, সততা কাউকে ধরে বেঁধে শেখাতে হয় না। নিজেকে বুঝতে হবে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। দনের শেষে হিসাব মিলিয়ে নিতে হবে। এমন কোনও কাজ যেন রোজকার রুটিনে না থাকে, যা অস্বস্তিতে ফেলবে। তাহলে জীবনে আর কোনও ভয় থাকবে না। সৎ পথে থাকলে জয় হবেই। এমনটা মনে করতেন টাটা। নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়েই সে কথার প্রমাণ দিতেন। ঘুষ না দেওয়ার ঘটনাও এরই অংশ মাত্র।