ডিজিটাল যুগে অপরাধের নতুন ধরন ডিজিটাল হাউস অ্যারেস্ট। একেবারে সিনেমার কায়দাতেই হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। প্রতারণার এই নয়া ছক নিয়ে এবার সতর্ক করল পুলিশ প্রশাসন। কী এই ডিজিটাল হাউস অ্যারেস্ট? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কথায় বলে, খলের ছলের অভাব হয় না। ঠিক তেমনই, প্রতারণার নিত্যনতুন কায়দাকানুন খুঁজে বের করতে ক্লান্তি নেই অপরাধীদের। আর ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই প্রতারণার পরিকল্পনাকে আরও নিখুঁত করছে তারা। এমনই প্রতারণার একটি নয়া ধরন নিয়ে এবার আমজনতাকে সতর্ক করা হল পুলিশের তরফে। বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে যত প্রতারণার খবর সামনে এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং ভয় ধরানো এই বিশেষ ধরনের প্রতারণাটিই, যার নাম ডিজিটাল হাউস অ্যারেস্ট।
ডিজিটালি গৃহবন্দি করা বিষয়টি আসলে ঠিক কী?
আসলে এই ধরনের প্রতারণায় সাইবার জালিয়াতেরা ভয় দেখিয়ে তাদের শিকারকে বাড়িতে আটকে রাখে। প্রথমে ইডি, সিবিআই, কি আয়কর দপ্তরের আধিকারিক- এমন কোনও পরিচয়ে তারা ফোন করে। যাকে ফোন করা হচ্ছে, তার সঙ্গে কোনও বেআইনি কাজের যোগসূত্র মিলেছে, এই অভিযোগ তুলে ভয় দেখাতে থাকে তারা। দাবি করে, ওই ব্যক্তির সিম কার্ড, আধার কার্ড বা অন্যান্য পরিচয়পত্র, কিংবা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কোনও না কোনও ভাবে দুর্নীতিতে ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই অভিযোগের ভিত্তিতেই রীতিমতো জেরা শুরু করে তারা। বলা হয়, জেরা চলাকালীন বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়া যাবে না। স্বাভাবিকভাবেই ওপ্রান্তের মানুষটি এই পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যান। এই প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা আরও জানাচ্ছেন, কেবল এইখানেই প্রতারণার শেষ নয়। অডিও কলে পুলিশ বা আধিকারিক পরিচয় দিয়ে প্রতারক যখন কথা চালাচ্ছে, তখন তার কথার সঙ্গেই ভেসে আসে পুলিশের রেডিও ট্রান্সমিশন জাতীয় আওয়াজ। কথা চালাতে চালাতে একসময় ভিডিও কলে আসার নির্দেশ দেয় প্রতারক। সেখানে দেখা যায় তার পরনে পুলিশের উর্দি। ফাঁদে ফেলা মানুষটিকে ব্যাঙ্কের তথ্য দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। বিদেশ থেকে কোনোরকম লেনদেন হয়েছে কি না, তা দেখার নামে ব্যাঙ্কের যাবতীয় তথ্য চলে যায় হ্যাকারের হাতে। অন্যদিকে ফোন বা কম্পিউটারের সমস্ত অ্যাক্সেসও হ্যাক করে ফেলে জালিয়াত। সব মিলিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা লুঠ করে নেয় ওই জালিয়াতেরা।
সম্প্রতিই বিদেশে পাঠানো পার্সেলে মাদক ও অন্যান্য নিষিদ্ধ জিনিস পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগে ভয় দেখিয়ে নয়ডার এক মহিলার থেকে ৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা লুঠ করেছে এই জালিয়াতেরা। এক মহিলার পার্সেলে আপত্তিকর জিনিস রয়েছে, এই অভিযোগে গৃহবন্দি করে ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে জালিয়াতরা। নয়ডাতেই প্রকাশ্যে এসেছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা প্রতারণার আরও একটি ঘটনা। অশ্লীল ভিডিয়ো কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ার ভয় দেখিয়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে এক মহিলা চিকিৎসককে সেখানে হাউস অ্যারেস্টে রাখা হয়েছিল।
সাম্প্রতিক কালে এমন একের পর এক অভিযোগ আসতেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। সাফ জানানো হয়েছে, পুলিশ প্রশাসন বা সরকারি এজেন্সিগুলি কাউকে ভিডিও কলে অ্যারেস্ট করে না। সুতরাং এহেন ঘটনার মুখোমুখি হলে ভয় না পেয়ে দ্রুত পুলিশের সাহায্য নিন, আমজনতাকে পরামর্শ রাজধানীর পুলিশের।