ব্যাটে-বলে ঝড় উঠলে সমর্থকদের মুখে চওড়া হাসি। আর রানে খরা এলেই সেই তারকাদের ধুলোয় টেনে নামান ভক্তরাই। জীবনের মন্দ-ভালোর মতোই, খেলার হারজিতকেও কি মেনে নিতে শিখব না আমরা?
মেঘলা আকাশ। সুইংয়ের বিরুদ্ধে দুর্বলতা। ভুল সিদ্ধান্ত। সবকিছুর মিলিত ফলে দাঁড়াল, মাত্র ৪৬ রানেই অল আউট টিম ইন্ডিয়া। যে দলটা ২০১৩ সাল থেকে ঘরের মাঠে টানা ১৮টা টেস্ট সিরিজ জিতেছে, পরপর দুবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলেছে, সেই ভারতের ডেরায় এসে ঘাতক হয়ে উঠল নিউজিল্যান্ড। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে টিম ইন্ডিয়াকে নিয়ে ছেলেখেলা করলেন কিউয়ি পেসাররা। আর তারপরেই, মার-খাওয়া ব্যাটারদের আরও পড়তে হল ভক্তদের আরও একপ্রস্থ আক্রমণের মুখে। কেউ বলছেন, বিরাট-রোহিতের যুগ শেষ। তো কারও দাবি, এবার অবসর নিয়েই নিন কিং কোহলি। অথচ, এ কথাও তো সত্যি যে, মাত্র কিছুদিন আগেই এই টিম ইন্ডিয়াই দুরমুশ করে ছেড়েছিল বাংলাদেশকে। মাত্র আড়াই দিনেই সিরিজ গুটিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল টাইগারদের। সেসময় ভারতীয় ব্যাটারদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কদিন পরেই, সেই তাঁরাই সব ভুলে আক্রমণ শানাচ্ছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের লজ্জার দিনে দেশবাসীকেও পাশে পেলেন না ব্যাটারেরা। আর সেখানেই প্রশ্ন ওঠে, রানের প্রপাতের মতো রানের খরাও যে খেলার দুনিয়ায় সত্যি, সে কথা কি মানতে শিখব না আমরা?
বৃহস্পতিবার টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কিন্তু বৃহস্পতিবার ব্যাট করতে নেমে ভারতের খাতায় কেবলই ব্যর্থতা। ঘরের মাঠে এতদিন পর্যন্ত টেস্টের এক ইনিংসে সর্বনিম্ন রান ছিল ৭৫। দিল্লিতে ১৯৮৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মাত্র ৭৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ভারত। কিন্তু এদিন তারও কম রানে থেমে গেল রোহিত ব্রিগেড। দলের পাঁচ ব্যাটার আউট হলেন খাতা না খুলেই। দুই অঙ্কের রানে পৌঁছন মাত্র দুজন ব্যাটার। বিরাট কোহলি, সরফরাজ খান, কে এল রাহুল, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন- তাবড় তারকারা প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন কোনও রান না করেই। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৮তম বার শূন্য রানে আউট হলেন বিরাট। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে তাঁর থেকে বেশি বার শূন্য রানে আউট আর কেউ হননি। কিন্তু এ কথাও তো অনস্বীকার্য যে, ৩৮টা শূন্য করেছেন বলে বিরাটের ৮০টা শতরান ভুলে যাওয়া চলে না। ভুলে যাওয়া চলে না যে কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৭ হাজার রানের মাইলফলক পার করেছেন বিরাট। ভোলা যায় না যে, এক দিনের ক্রিকেটে আর ৯৪ রান করলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন ১৪ হাজার রানের মাইলফলক। ঠিক তেমনই, ভোলা যায় না যে এই টিম ইন্ডিয়াই একটিও ম্যাচ না হেরে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেছিল। সম্প্রতিই টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেশকে ট্রফি এনে দিয়েছে মেন ইন ব্লু।
আসলে, মানুষের স্মৃতি বড় দুর্বল। ক্ষণস্থায়ীও বটে। তাই সাফল্যে সে যত উত্তেজিত হয়, ব্যর্থতায় উদ্বেল হয় তার চেয়ে ঢের বেশি। সেই মুহূর্তে পূর্বের সাফল্যের খতিয়ান মনে রাখা তার আর সম্ভব হয় না। কিন্তু খেলার দুনিয়া আর জীবনের স্কোরশিট তো আসলে একইরকম। সেখানে শতরান আর শূন্য দুই-ই থাকে। কোনও মানুষই যন্ত্র নন যে সবসময় একই সাফল্য বা ব্যর্থতার হার তিনি বজায় রেখে চলবেন। শিল্পীর তুলি রোজই একই টান দিতে পারে না, আর সেখানেই শিল্পের সৌন্দর্য। সে কথা মনে রাখাই কিন্তু পরিণতির লক্ষণ। জীবনের মন্দ-ভালোর মতোই, খেলার হারজিতকেও মেনে নিতে হবে, অনুরাগীরা এ কথা মনে রাখলে তা তারকা এবং ভক্ত উভয়ের পক্ষেই মঙ্গল।