প্রয়াত স্বামীর কৃত ঋনশোধের ক্ষমতা নেই। সন্তানদের নিয়ে পথে বসেছিলেন বিধবা মহিলা। ত্রাতা হলেন শিল্পপতি। শোধ দিলেন ৮ লক্ষ টাকার ঋণ। এই একটা ঘটনা নয়। বারবার মহানতার পরিচয় দিয়েছেন এই ধনকুবের। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কথায় আছে, লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন! এই প্রচলিত প্রবাদে সত্যিকারের গৌরী সেন কে? তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তবে ধনী কাউকে বোঝাতে এই উপমা ব্যবহার করা যেতেই পারে। শর্ত একটাই, তাঁকে হতে হবে দিলখোলা মানুষ। বিপদের দিনে যে কাউকে অর্থ সাহায্য করতে দুবার ভাবেন না, এমন কেউ।
যার কথা বলছি, তাঁকেও গৌরী সেন বললে ভুল হয় না। বিখ্যাত ব্যবসায়ী তথা লুলু গ্রুপের চেয়ারম্যান ইউসুফ আলি। অসহায়দের সাহায্য করতে সবসময় প্রস্তুত থাকতেন ইউসুফ। কেরলের ঘটনার দিকে তাকালেই প্রমাণ মিলবে। স্থানীয় এক মহিলা ইউসুফের সাহায্য পেয়েই নতুন করে জীবন শুরু করেছিলেন। ঘটনা বছর তিনেক আগেকার। মহিলার স্বামী ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি করেন। কিন্তু বাড়ি তৈরির আগেই মারা যান। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে মহিলার। বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারীর অকাল প্রয়াণে কীভাবে সবদিক সামলাবেন ভেবে কুল পাচ্ছিলেন না। তারওপর মাথায় ঋণের বোঝা। বেসরকারি সংস্থা থেকে নেওয়া ওই ঋণ ততদিনে ৮ লক্ষ ছুঁয়েছে। সন্তানদের নিয়ে মহিলা বাধ্য হন পথে নামতে। ঋণশোধ না হলে বাড়ি কেড়ে নেবে ঋণদায়ী সংস্থা। এমন সময় ইউসুফ এই খবর পান। নিজ উদ্যোগে মহিলার ঋণশোধ করেন। শুধু তাই নয়, আরও ১০ লক্ষ টাকা সাহায্য হিসেবে মহিলার হাতে তুলে দেন। সেই টাকা দিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেন মহিলা। এমন ঘটনা রয়েছে আরও অনেক।
ব্যবসায়ী হিসেবেও যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছিলেন ইউসুফ। একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর ব্যবসা। তাতে অর্থ প্রতিপত্তি যেমন হয়েছিল, নামও হয়েছিল রীতিমতো। আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিনে তাঁকে নিয়ে লেখা বেরোত। কীভাবে নিজের চেষ্টায় এই জায়গায় ব্যবসা পৌঁছে দেন ইউসুফ, তা অনেককেই অনুপ্রেরণা জোগায়। আসলে, এ দেশে শিল্পপতির সংখ্যা কম নেই। কিন্তু কতজন এইভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সদ্য প্রয়াত রতন টাটার নাম এক্ষেত্রে না নিলেই নয়। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে একাধিক উদ্যোগ নেন রতন টাটা। সেসব থেকে আজও উপকার পাচ্ছেন অনেকে। ক্রীড়া থেকে বিনোদন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। একইভাবে লুলু গ্রুপের চেয়ারম্যান ইউসুফেরও প্রশংসা করে থাকেন অনেকে। রতন টাটার সঙ্গে তুলনা না করলেও, ইউসুফও যে মানবদরদী শিল্পপতি সে নিয়ে সন্দেহ রাখেন না প্রায় কেউই।