‘লগান’ তো ল্যাবরেটরিতে বসে লেখা কাল্পনিক স্ক্রিপ্ট। এগারোর ২৯ জুলাই লগানের আগের আসল লগান। এটা যদি হোলসেল মার্কেট হয় তো আমিরেরটা রিটেল। ঐতিহাসিক মোহন বাগান দিবসের স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ। কলম ধরলেন গৌতম ভট্টাচার্য।
ইয়র্কশায়ার তো পৌঁছলাম। কিন্তু ইস্টইয়র্ক ক্লাবের লোকেশনটা কোথায় ? হেডিংলে থেকে কত দূরে ?
বয়কটের ইয়র্কশায়ার। হাটনের ইয়র্কশায়ার। সচিনের প্রথম কাউন্টি খেলা ইয়র্কশায়ার। কিন্তু বাঙালির ইয়র্কশায়ার বলতে তো শুধুই কয়েকটা লেজেন্ডের নাম আর তাঁদের ঘিরে কীর্তির মায়াজাল নয়। আমি যে শহর থেকে নিরানব্বইয়ের ক্রিকেট বিশ্বকাপ কভার করতে এসেছি তার লোকগাথা তো ইয়র্কশায়ার কাউন্টির সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে জড়িয়ে গেছে।পলাশির যুদ্ধ যেমন তার অসম্মানের দীর্ঘ কারাবাস বয়ে আনে। সিপাহী বিদ্রোহ যেমন বিপ্লবী আন্দোলনের চিরকালীন সূচক। বঙ্গজ ক্রীড়াপথিকের কাছে তেমনি প্রাতঃস্মরণীয় জোব চার্নকের শহরে গঙ্গাপারের ফুটবল যুদ্ধ জয়। বাংলার অগ্নিযুগের বিপ্লবী আন্দোলন ওটা বাদ দিলে বইয়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা প্যারাগ্রাফ হারায়। আর তার সঙ্গেই কিনা জড়িয়ে আছে পূর্ব ইয়র্কশায়ার।
আরও শুনুন: Olympic: বাবা বাসচালক, বাংলার প্রথম জিমন্যাস্ট হিসেবে অলিম্পিকে স্বপ্নের উড়ানে প্রণতি
ছিয়াশির বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা জেতার পর মারাদোনার বিখ্যাত ‘হ্যান্ড অফ গড’ নয়। আর্জেন্টিনার বিখ্যাত কাগজগুলোর প্রথম লাইন ছিল ফকল্যান্ডের বদলা নেওয়া গেল। আসলে কোনও কোনও ম্যাচ এমনই অপ্রত্যাশিত উচ্চতা ধারণ করে ,হঠাৎ এমন সব ইঙ্গিত যোগ করে দেয়, যে, মনে হতে থাকে এর পেছনে নিছক কৌশলী সংগঠক বা মিডিয়া নেই। জল স্থল বা অন্তরীক্ষ থেকে কোনো আদিদৈবিক শক্তি এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করছে। ২৯ জুলাই তেমনি বাংলা ক্যালেন্ডারে লাল তারিখ দাগিয়ে দেওয়া একটা তারিখ। শিবদাস ভাদুড়িরা নিছক কলকাতার জন্য ট্রফি জেতেননি। অবিভক্ত ভারতে পেশোয়ার থেকে কন্যাকুমারিকা – একটা গতিমান চিন্তার মশাল জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন, যে চলো আগুন হাতে নিয়ে দৌড়োই। ওদের জ্বালিয়ে দিয়ে আসি।
আরে, ‘লগান’ তো ল্যাবরেটরিতে বসে লেখা কাল্পনিক স্ক্রিপ্ট। এগারোর ২৯ জুলাই লগান-এর আগের আসল লগান। এটা যদি হোলসেল মার্কেট হয় তো আমিরেরটা রিটেল।
প্রথম যখন স্পোর্টস জার্নালিজমে আসি ,সিনিয়রদের মুখে শুনেছিলাম রেভারেন্ড সুধীর চ্যাটার্জিকে নিয়ে যে ঘটনাটা লোকমুখে ঘোরে- উপবীতধারী এক ব্রাহ্মণ শিল্ড ফাইনালের পর তাঁকে এসে বলেছিলেন যে এটা তো হল। এবার হাই কোর্টের ওপর ওই ইউনিয়ন জ্যাকটা কবে আনবে ? সেটা নাকি মিথ। অথচ ফাইনালে মোহন বাগানের একমাত্র বুট পরে খেলা প্লেয়ার সুধীরবাবুর পুরোনো লেখা উদ্ধারে দেখছি, ঘটনাটা সর্বাংশে সত্যি।ম্যাচের পর কাস্টমস টেন্টের পাশ দিয়ে হেঁটে ফিরছিল টিম। হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে উদয় হন ওই ব্রাহ্মণ। বলেন, সাবাশ বাবা, এটা জয় করে নিতে পেরেছো। ফোর্ট উইলিয়ামের ওপর ওটা কবে নামবে ? সুধীরবাবু মারা যান ১৯৬৬-তে। এই লেখা তার দু’বছর আগের। সাতান্ন বছর পরেও যা পড়লে মনে হয় চোখের সামনে ফিল্মের রঙিন ক্যানভাসে এমন জীবন্ত দৃশ্য দেখছি যা আধুনিক ওটিটি-ও দেখাতে অসমর্থ।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।