সম্পূর্ণ ঘি দিয়ে তৈরি মূর্তি। কিন্তু তাতে পুজো হবে কীভাবে? কিছুক্ষণ বাইরে থাকলেই তো গলে যাবে বিগ্রহ। তাই মণ্ডপের তাপমাত্রাই বরফশীতল করা হয়েছে। কোন মণ্ডপে রয়েছে এমন মূর্তি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মাটির তৈরি মূর্তি বেশিরভাগ মণ্ডপেই দেখা যায়। থিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বোতাম, কাঠ এমনকি বিস্কুটের তৈরি মূর্তিও তৈরি হয়েছে। কিন্তু ঘি দিয়ে মূর্তি তৈরি আদৌ সম্ভব? রাজস্থানের এক মণ্ডপে এমনটাই করে দেখিয়েছে। মণ্ডপে রাখা হয়েছে সম্পূর্ণ ঘি দিয়ে তৈরি দেবী মূর্তি।
শাস্ত্রে বিগ্রহ তৈরির বিশেষ নিয়মের উল্লেখ মেলে। তাতে অবশ্য ধাতু এবং পাথরের তৈরি মূর্তির কথাই রয়েছে। মাটি বা কাঠ দিয়ে মূর্তি গড়লেও সমস্যা নেই। এমনকি পারদ, স্ফটিক সহ বিভিন্ন দামী জিনিস দিয়ে মূর্তি গড়া যায়। ঘি দিয়ে মূর্তি তৈরির কথা সেই অর্থে শাস্ত্রে বলা নেই। মূর্তি স্নান করাতে ঘি প্রয়োজন হলেও, মূর্তি তৈরি করতে এ জিনিসের দরকার পড়ে না। কিন্তু রাজস্থানের এক পুজো কমিটি সেই ঘি দিয়েই তাঁদের এবারের প্রতিমা গড়েছেন। বাংলার বাইরে সেইভাবে দুর্গাপুজোর চল না থাকলেও, নবরাত্রি পালন করা হয় ঘটা করে। এমনই এক নবরাত্রি উদযাপনে আনা হয়েছে ঘি-এর তৈরি দেবী মূর্তি। তবে এই প্রথম নয়। দির্ঘদিন ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। রাজস্থানের সিরোহি জেলার জাওয়াল গ্রামে এই মূর্তিই আকর্ষণ। নবরাত্রির সময় মণ্ডপে দেখা যায় মূর্তি। নিয়মিত আরাধনা চলে। তবে ফুল মালা পরানো হয় না সেই ভাবে। মূর্তি ছোঁয়ার অনুমতিও পান না তেমন কেউ। পাছে মূর্তির কোনও ক্ষতি হয়! কিন্তু ঘিয়ের মূর্তি একটু গরম পরলেই তো গলে যাওয়ার কথা। তাহলে কীভাবে রাখা হয় এই মূর্তি?
তার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। মণ্ডপে একাধিক এসি লাগিয়ে চারপাশ হিমশীতল করে রাখা হয়। তাপমাত্রা বরফের মতো। শীতের জামা না পরে ভিতরে ঢোকা যায় না। বরফ না থাকলেও ভিতরে খানিকক্ষণ কাটালে জ্বর আসতেই পারে। তাও ভক্তি আর বিশ্বাসে ভর করে মণ্ডপে হাজির থাকেন ভক্তরা। একসঙ্গে ভিড় করে যাওয়ার অনুমতি মেলে না। মূর্তি তৈরি করেন গুজরাটের শিল্পীরা। গোটা দেশের মধ্যে এই রাজ্যেই নবরাত্রি উদযাপিত হয় সবথেকে বড় করে। তাই এখানকার শিল্পীরা নিখুঁতভাবে মাতৃপ্রতিমা গড়তে পারেন। প্রতিবছর রাজস্থানে গিয়ে মূর্তি গড়ে আসেন তাঁরা। স্থানীয়দের কাছে এই মণ্ডপের পুজো বেশ জনপ্রিয়। তা যে ঘি-এর মূর্তির কারণেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।