আর জি কর কাণ্ডের নির্যাতিতা চিকিৎসকের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে লড়ছেন বৃন্দা গ্রোভার। কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই। তাঁরই মতো, প্রায় বিনামূল্যেই কেস লড়েছিলেন আরেক খ্যাতনামা আইনজীবীও। কী কারণে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কর্মক্ষেত্রে রাতের ডিউটি করতে করতে ধর্ষণ খুনের শিকার চিকিৎসক তরুণী। তাঁর জন্য ‘জাস্টিস’ অর্থাৎ ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব রাজ্যের সাধারণ মানুষ। বিচারের দাবি উঠেছে দেশের নানা প্রান্ত থেকেও। সেই মেয়ের জন্যই এবার সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করতে কোমর বেঁধেছেন প্রখ্যাত আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার। গোটা দেশ তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও খ্যাতিমান এই দুঁদে আইনজীবী মহিলা ও শিশুদের প্রতি নির্যাতনের বিরুদ্ধে জীবনভর লড়াই করে চলেছেন। জানা গিয়েছে, আর জি করের নির্যাতিতার হয়ে লড়াই করতে কোনও পারিশ্রমিক নেবেন না তিনি। আর সেই খবরেই আরও একবার, শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়েছে আমজনতা।
আরও শুনুন:
ধর্ষণের ফলে জন্ম, লড়াই করে নির্যাতিতা মাকে ন্যায়বিচার এনে দিলেন ছেলেই
কোনও কাজের জন্য পারিশ্রমিক দেওয়ারই কথা, এ নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু এ দেশে বিচারপ্রক্রিয়া একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি, সঙ্গে ব্যয়সাপেক্ষও বটে। যে কোনও পেশাতেই দক্ষ মানুষের যেমন কদর বেশি, আইনজীবীদের ক্ষেত্রেও সে কথা খাটে। ফলে ভালো আইনজীবীদের পারিশ্রমিকের অঙ্কও বেশি হয়। সে পারিশ্রমিক যেমন তাঁদের দক্ষতা আর পরিশ্রমের দাম, এ কথা সত্যি, কিন্তু এ কথাও তো জানা যে এ দেশের অনেক মানুষেরই আর্থিক সামর্থ্য অত্যন্ত সীমিত। অভয়ার পরিবারের কথাই যদি ধরি, দর্জির পেশায় থাকা তাঁর বাবার পক্ষে বিপুল আইনি ব্যয় মেটানো সত্যিই কঠিন। সেখানেই বৃন্দা গ্রোভারের এই মানবিক সিদ্ধান্ত তাঁদের লড়াইটাকে খানিক সহজ করে তুলল।
আর বৃন্দার এই প্রসঙ্গেই মনে আসছে আরও এক বিখ্যাত আইনজীবীর কথা। মাত্র এক টাকার বিনিময়ে এমনই এক হেভিওয়েট কেস লড়েছিলেন তিনি। অভিযুক্তকে ন্যায়বিচার দেওয়ার তাগিদের কাছে তুচ্ছ করেছিলেন নিজের পারিশ্রমিক। তিনি হরিশ সালভে। দেশের প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল। এখনও আম্বানি, মিত্তালদের মতো তাবড় শিল্পপতিরা তাঁর দ্বারস্থ হন। সুতরাং তাঁর পারিশ্রমিকের অঙ্কটা সহজেই আন্দাজ করা যায়। কিন্তু এই সালভে-ই মাত্র এক টাকার বিনিময়ে কুলভূষণ যাদবের মামলা হাতে নিয়েছিলেন। চর সন্দেহে পাকিস্তানের আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। সেই মামলায় কুলভূষণকে মুক্ত করেছিলেন সালভে। শোনা যায়, অভিযুক্তকে নির্দোষ বলে বিশ্বাস করলে বিনামূল্যে বা অত্যন্ত সামান্য পারিশ্রমিকেই মামলা লড়তে এগিয়ে যান এই আইনজীবী। আর এই ঘটনাগুলোই সাধারণ মানুষকে একটু হলেও ভরসা দেয় যে, আইনের কাছে জাস্টিস পাওয়ার দাবিদার তারাও।