বেলপাতা নয় দেবাদিদেবের পুজো হয় তুলসী দিয়ে। হয় না রুদ্রাভিষেক। এমনকি বাবার বার হিসেবে পরিচিত সোমাবার এই মন্দিরে তেমন ভিড় চোখে পড়ে না। বরং বুধবার বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা হয় মন্দিরে। কোন মন্দির এমন উলটো নিয়মে চলে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শিবমন্দির। অথচ সেখানে বেলপাতা নেই। রয়েছে তুলসীর স্তূপ। শিবলিঙ্গে বেলপাতার বদলে দেওয়া হয় তুলসী পাতা। এমনটাই নাকি নিয়ম! শুধু তাই নয়, এই মন্দিরে বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা হয় বুধবার। গোটা দেশ যে সোমবার শিবের আরাধনায় মেতে ওঠে, সেদিন এখানে আলাদ কোনও উন্মাদনা চোখে পড়ে না।
কথা বলছি কেরলের রাজরাজেশ্বর মন্দির সম্পর্কে। মন্দিরের আরাধ্য মহাদেব। তবে দেশের অন্যান্য সব মন্দিরের থেকে এখানকার নিয়ম আলাদা। এমনিতে শিবলিঙ্গে তুলসীপাতা দেওয়া নিষিদ্ধ। শাস্ত্রেই রয়েছে এমন নিয়ম। কিন্তু রাজেরাজেশ্বর মন্দিরে এমনটাই করা হয়। নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ কারণ। বয়সের হিসাবে এই মন্দির বেশ প্রাচীন। ঠিক কবে তৈরি হয়েছিল সঠিক তথ্য মেলে না। মন্দিরের কারুকাজ দেখে ঠাহর করা যেতে যেতে নির্মানকাল। তাতেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মন্দির কয়েক হাজার বছরের পুরনো। কেউ কেউ বলেন, এই মন্দির তৈরি করেছিলেন পরশুরাম। বিষ্ণুর অবতার এই মহান যোদ্ধা শিবের উপাসক ছিলেন। কিন্তু নারায়ণের প্রিয় তুলসীপাতা দিয়েই এই মন্দিরে পুজো করতেন তিনি। স্থানীয় জনশ্রুতি বলে, সেই থেকেই এই মন্দির বেলপাতার বদলে তুলসী দিয়ে পুজোর নিয়ম। তবে সোমের বদলে বুধবার কেন বিশেষ পুজো হয়, সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারেন না। প্রচলিত নিয়ম তাই সবাই মেনে চলেন। এখানেই শেষ নয়। এই মন্দিরে শিবের রুদ্রাভিষেকও হয় না। দেশের অন্যান্য সব শিবমন্দিরেই ঘটা করে এই অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়। জ্যোতির্লিঙ্গ বা প্রসিদ্ধ মন্দিরে তো দেখার মতো অহ্য শিবের রুদ্রাভিষেক। সেখানে রাজেরাজেশ্বর মন্দিরে এমন কিছুর নিয়ম নেই। এখানে ঘটা করে উদযাপিত হয় ধ্বজাপুজো। পুরীর মন্দিরে যেভাবে ধ্বজা বদলানোর নিয়ম রয়েছে, এখানেও নির্দিষ্ট সময়ের পর তা করা হয়।
এছাড়া এই মন্দির ঘিরে আরও অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। বলা হয়, এখানকার শিবের মাহাত্ম্য এমনই যে কেউ মন্দিরে প্রবেশ করলে তা টের পাবেন। অন্যরকম অনুভূতি হবে। মনে হবে বিশেষ কোনও ক্ষেত্রে প্রবেশ করা হয়েছে। বিশেষ করে যুবতীরা। অর্থাৎ যাঁদের ঋতুকালীন বয়স পেরিয়েছে। তাঁদের জন্য এই মন্দির অত্যন্ত ফলদায়ক, মনে করেন স্থানীয়রা। তাই গ্রামের মেয়েরা যুবতী হলে তাঁদের মন্দিরে আনা হয়। আলাদা করে পুজোর ব্যবস্থাও করেন অনেকে। মন্দিরের গঠনে রয়েছে প্রাচীনত্বের ছোঁয়া। মূর্তিও খানিক অন্যরকম। এই মন্দিরকে কেরলের প্রসিদ্ধ ১০৮ শিবমন্দিরের অংশ মনে করা হয়। তাই প্রতিদিন কাতারে কাতারে ভক্তরা আসেন মন্দিরে পুজো দিতে। সকলেই এক নিয়ম মেনে পুজো দেন। বিশ্বাস, এমনটা করেই উপকৃত হয়েছেন হাজার হাজার ভক্ত।