পূর্বজন্মের কথা মনে আছে। জিজ্ঞাসা করলেই গড়গড় করে বলে দেন। বিশ্বাস না করে উপায় নেই। কারন কোথাও এতটুকু ভুল নেই সে কথায়। খোদ মহাত্মা গান্ধীও মহিলার আশ্চর্য ক্ষমতা দেখে চমকে গিয়েছিলেন। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
‘সোনার কেল্লা’র মুকুলের মতো ইনিও নিজেকে ‘জাতিস্মর’ বলে দাবি করতেন। তবে এক্ষেত্রে গল্পটা খানিক আলাদা। কারণ এঁকে কেউ অপহরণ করেনি। কিংবা কোনও গুপ্তধনের সন্ধানও ইনি দেননি। স্রেফ গড়্গড় করে বলে দিয়েছিলেন নিজের পূর্বজন্মের কথা। চিনতে পেরেছিলেন আগের জন্মের স্বামীকে। তবে তাঁর এই অদ্ভুত ক্ষমতা পরখ করতে ভারত সরকারকে অবধি ঘোল খেতে হয়েছিল
কথা বলছি শান্তি দেবী সম্পর্কে। ১০৯২৬ সালের ডিসেম্বরে তাঁর জন্ম। বেড়ে ওঠা দিল্লি শহরে। কিন্তু ছোট থেকেই নিজেকে মথুরার বাসিন্দা মনে করতেন এই শান্তি। মাত্র চার বছর বয়সে দাবি করেন তাঁর আসল নাম শান্তি নয়। বাড়িও অন্য জায়গায়। সেখানে স্বামী সন্তান সব রয়েছে। প্রথমে তাঁর কথা কেউ বিশ্বাস করতে চায়নি। এমনটাই স্বাভাবিক অবশ্য। তবে সারাক্ষন এমনভাবে নিজের পূর্বজন্মের কথা বলে যেতেন শান্তি, যে একসময় সকলেই নড়েচড়ে বসেন। ঠিকমতো জায়গার নাম না বলতে পারলেও তার আশেপাশে কি রয়েছে সেসব বলেছিলেন শান্তি। তবে স্বামীর নামের বদলে স্রেফ পদবীটুকু বলেছিলেন। তাই নিয়ে তো আর আস্ত একজন মানুষকে খোঁজা সম্ভব নয়। তাও অনেক চেষ্টা করে খোঁজ মেলে। শান্তি বলেছিলেন, তিনি মথুরার চৌবান পরিবারের অংশ। সেই সূত্র ধরে জানা যায়, মথুরার কেদারনাথ চৌবেকে ইঙ্গিত করছেন শান্তি। মথুরার ওই ব্যক্তির কাছে পৌঁছয় চিঠি। বিষয়টা পরখ করে দেখতে তাঁকে দিল্লি আসা অনুরোধ জানান শান্তির পরিবারের সদস্যরা। এবার, কেদারনাথও এই দাবি মানবেন কেন! বুদ্ধি করে নিজে না এসে ভাইপোকে পাঠান সবটা খতিয়ে দেখার জন্য। যদি সত্যি শান্তি সবকিছু জানে তাহলে এই ভাইপোকেও চেনার কথা। বাস্তবে হয়েওছিল তাই। সেকথা কেদারনাথ জানার পর তড়িঘড়ি ছুটে আসেন দিল্লি। সামনে থেকে স্বামীকে দেখে কেঁদে ভাসান শান্তি। এমনকি নিজের ছেলেকেও চিনতে পারেন। জানা যায়, শান্তি যে মহিলার সঙ্গে নিজের তুলনা করছিলেন তিনি কেদারনাথের দ্বিতীয় স্ত্রী। মারা গিয়েছেন শান্তির জন্মের আগে। তাও সবটা যাচাই করে দেখতে শান্তির সঙ্গে একান্তে অনেকটা সময় কাটান কেদারনাথ। তাতেই আরও স্পষ্ট হয় সবকিছু। এমন কথা যা স্রেফ তাঁর মৃতা স্ত্রীর পক্ষেই জানা সম্ভব, সেইসব গড়গড়িয়ে বলে দিয়েছিল শান্তি। কেদারনাথ মেনে নেন শান্তিই তাঁর মৃতা স্ত্রীর পূনর্জন্ম। কিন্তু বিজ্ঞান তা মানবে কেন?
ঘটনার কথা পৌঁছয় গান্ধীজির কানে। তিনি শান্তিকে ডেকে পাঠান। সবটা শোনেন। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে নির্দেশ দেন, শান্তির কথা যাচাই করে দেখার। তৈরি হয়ে বিশেষ এক কমিটি। যারা দীর্ঘদিন ধরে শান্তির গতিবিধি নজরে রাখে। এর মাঝে একবার একা একা মথুরা চলে যান শান্তি। পৌঁছে যান নিজের পুরনো ভিটেতে। কেন্দ্রীয় কমিটিও তাঁকে সেখানে নিয়ে যায় পরে। তাঁর আচরন ঠিক কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে সব কিছু দেখা হচ্ছিল। তবে সঠিক ভাবে এর ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর শান্তির সঙ্গে কথা বলেন আরও অনেকেই। বিশেষ করে বিজ্ঞানী মহলে তাঁকে নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় রীতিমতো। কয়েকজন দাবি করেন, বিষয়টা মোটেও জাতিস্মরের নয়। এমন কিছু বিজ্ঞানে অস্তিত্ব নেই। আবার কেউ কেউ উত্তর খুঁজে না পেয়ে বিষয়টি অমীমাংসিত হিসেবেই ছেড়ে দেন। তবে শান্তি নিজে এই বিষয়টা ছাড়তে পারেননি। মৃত্যুর আগের দিন অবধি মনে করতেন তিনি শান্তি নন। তাঁর বাড়িও দিল্লিতে নয়। কেন এমনটা ভাবতেন সে উত্তর তাঁর কাছেও ছিল না। তবে বিয়ে করেননি নতুন কাউকে। মথুরার কেদারনাথকে স্বামী মনে করেই জীবন কাটিয়ে দেন।