প্রসাদে মুরগির ডিম। এমনটাই নিয়ম। তাও আবার যোগীরাজ্যে। বিশ্বাস, এইভাবে পুজো দিলে সুস্থ থাকবে সন্তান। কোন মন্দিরের কথা বলছি? এমন নিয়মের নেপথ্যে কারণটাই বা কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মা কালীর ভোগে হাঁসের ডিম দেওয়ার চল অনেক জায়গাতেই রয়েছে। তন্ত্রমতে দেবীর পুজো হলে, হাঁসের ডিম ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রসাদ বা ভোগে মুরগির ডিম দেওয়ার কথা শোনা যায় না। ব্যতিক্রম যোগীরাজ্যের এই মন্দির। এখানে দেবতাকে মুরগির ডিম দিয়ে পুজো দেওয়ার চল রয়েছে। দূর দূর থেকে ভক্তরা ডিম নিয়ে হাজির হন মন্দিরে।
যোগীরাজ্যের ফিরোজাবাদ জেলা। সেখানকার বিলহেনে গ্রামের প্রসিদ্ধ মন্দিরেই রয়েছে এমন নিয়ম। স্থানীয়দের কাছে এটি বাবা নগর সেন-এর মন্দির হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন শয়ে শয়ে ভক্ত ভিড় জমান। সকলের হাতেই থাকে কাঁচা ডিম। এই দিয়েই পুজো দেওয়া নিয়ম। প্রসাদ হিসেবে মেলে হালুয়া, লুচি এবং ডিম। বিশ্বাস, এই প্রসাদ খাওয়ালে অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে বাড়ির খুদেরা যদি এই মন্দিরের প্রসাদ খায়, তাহলে নাকি কাজ হয় ম্যাজিকের মতো। তাই দলে দলে সন্তানের মঙ্গলকামনায় মন্দিরে ভিড় জমান ভক্তরা। বাবা নাগর ছিলেন স্থানীয় উপজাতির প্রধান আরাধ্য। তবে বর্তমানে সাধারণ সকলেই তাঁর ভক্ত হিসেবে মন্দিরে আসেন। পুজো দেন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। অনেকে অসুস্থ সন্তান কোলে বাবার দরবারে হাজির হন। ফেরেন সুস্থ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে। এমনিতে সারাবছর এই নিয়ম মেনে পুজো হয়। তবে বৈশাখ মাসে এই মন্দিরে বিরাট এক মেলা বসে। সেখানে রীতিমতো ভিড় হয়। তবে মজার বিষয় হল, এই মেলার সময় মন্দিরে ডিম ছোড়ার এক অদ্ভুত রীতি রয়েছে। দেবতার দিকেই ডিম ছোঁড়েন ভক্তরা। কেন এই নিয়ম তা ঠিকমতো বলতে পারেন না কেউই।
আসলে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। এই মন্দিরের নিয়মের সঙ্গে এই কথা বলা যেতেই পারে। প্রসাদ যা খুশি হতেই পারে, কিন্তু তা খেয়ে অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন এমনটা খানিক অবাঁক করে বইকী! কেউ কেউ দাবি করেন ডিমের মধ্যে থাকা প্রোটিনের জোরে এমনটা হয়। কিন্তু তাহলেও কি সবরকম অসুখ সারানো সম্ভব? প্রশ্ন উঠতেই পারে। আর এখানেই কথা বলে ভক্তি। প্রসাদ কতটা কাজের তা নিয়ে তর্ক থাকলেও ভক্তি আর বিশ্বাসে কোনও সন্দেহ নেই। আর সেই বিশ্বাসে ভর করেই এখানে হাজির হন ভক্তরা। তথাকথিত আমিষ-নিরামিষ দ্বন্দ্ব ভুলে, চিরাচরিত নিয়মে ডিম দিয়ে পুজো দেন আরাধ্যকে।