একটা সিনেমায় ৭২ খানা গান! এমনটা হওয়াও সম্ভব? শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এ দেশেই তৈরি হয়েছিল এমন এক সিনেমা। যাতে গুনে গুনে ৭২ খানা গান ছিল। কোন সিনেমার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সিনেমায় গান থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কটা? বড়জোর ৩-৪ টে। খুব বেশি হলে ৭-৮ টা। তার বেশি গান থাকলে দর্শক বিরক্ত হবেন। এমনটাই মনে করেন অধিকাংশ চলচিত্র নির্মাতারা। কিন্তু না, এমনও এক সিনেমা রয়েছে যেখানে মোট ৭২টা গান রয়েছে। একসময় তা বেশ জনপ্রিয়তাও কুড়িয়েছিল দর্শক মহলে।
কথা বলছি, ‘ইন্দ্রসভা’ সিনেমাটি সম্পর্কে। এটিই ভারতের দ্বিতীয় সবাক ছবি। আর সেখানেই ব্যবহার করা হয়েছিল ৭২ টি গান। সিনেমার নামের গানের ছোঁয়া রয়েছে। পুরাণমতে, দেবরাজ ইন্দ্রের সভায় নিয়ম করে জমাটি নাচ-গান আসর বসত। স্বর্গের অপ্সরাদের নাচ মুগ্ধ হয়ে দেখতেন দেবতারা। সেইসঙ্গে চলত আমোদ-প্রমোদ। বিভিন্ন সিনেমায় বা গল্পে দেবরাজের সভা দেখাতে গিয়ে এমন মজলিশের আসর দেখানো হয়েছে। প্রতিবছর মহালয়ার ভোরে টিভিতে যে মহিষাসুরমর্দিনীর অনুষ্ঠান হয়, তাতেও অনেক সময় দেখা যায় ভরা সভায় নাচের আসরে মেতেছেন ইন্দ্র। সেই দৃশ্যই ইন্দ্রসভা সিনেমায় দেখানো হয়েছে। তবে সিনেমার প্রতিটি অংশে রয়েছে একটি করে গান। মুখ্য চরিত্ররা তো বটেই, পার্শ্ব চরিত্র বা গৌণ চরিত্রে যারা অভিনয় করেছেন তাঁদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা গান রয়েছে সিনেমায়। কোথাও আবার যৌথভাবে নাচ হচ্ছে। কোথাও দ্বৈত সঙ্গীত। সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগবে এই সিনেমা শেষ করতে। এত দীর্ঘ সময় জুড়ে গল্প তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে রয়েছে একের পর এক গান। প্রতিটির ধরণ আলাদা। ‘ইন্দ্রসভা’ ছবিতে ৩১টি গজল, ন’টি ঠুংরি এবং চারটি হোরি ঠুংরি রয়েছে। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের দেখাও মেলে এই সিনেমায়।
জানা যায়, ছবিটি তৈরি হয়েছিল এক উর্দু নাটককে অনুসরণে। তার নামও ছিল ইন্দ্র-সভা। রচয়িতা ছিলেন আঘা হাসান আমানত। ১৮৫৩ সালে নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এরপর জার্মান ভাষায় এই নাটকের অনুবাদ হয় ১৮৮০ সালে। পর্দায় সিনেমা হিসেবে এটি দেখানো হয় ১৯২৫ সালে। তবে তখন এতে কোনও শব্দ ছিল না। কারণ ভারতে তখনও সবাক ছবির প্রচলন হয়নি। ১৯৩১ সালে ‘আলম আরা’ ছবিতে প্রথম শব্দের ব্যবহার হয়। তার পর মদন থিয়েটার ইন্দ্র-সভা ছবিটিকে বড় পর্দায় নিয়ে আসে। এবার আর নির্বাক নয়। ‘সাউন্ড ফিল্ম’ হিসাবেই দেখানো হয় সিনেমাটি। আর তাতেই জুড়ে দেওয়া হয়, গুনে গুনে ৭২টি গান। শোনা যায়, গানের জন্যই সিনেমাটি জনপ্রিয় হয়েছিল। খুব বেশি মুনাফা হয়নি। তবে গানের জন্য এই সিনেমা আজও অনেকেই মনে রেখেছেন।