আর জি কর মামালার লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ হোক। সুপ্রিম বিচারপতিকে এমনই অনুরোধ করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। জনস্বার্থ মামলার কারণ দেখিয়ে সেই দাবি খারিজ করে শীর্ষ আদালত। কিন্তু আদালত কক্ষের সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়েছিল কবে থেকে? নেপথ্যে কী এমন কারণ ছিল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের ঘটনার ১ মাসেরও বেশি সময় পেরিয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। ইতিমধ্যে তিনটি শুনানি হয়েছে। তৃতীয় শুনানিতে এই মামলার লাইভ সম্প্রচার নিয়ে আপত্তি তোলেন রাজ্যের তরফে থাকা আইনজীবী কপিল সিব্বল। তাতে অবশ্য সায় দেননি প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। সাফ জানিয়ে দেন, এটি জনস্বার্থ মামলা, তাই লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ হবে না। তবে এই প্রথম নয়। শীর্ষ আদালতে এর আগেও একাধিক মামলার লাইভ স্ট্রিম হয়েছে। যার দাবি উঠেছিল বছর খানেক আগে।
আরও শুনুন:
পাকিস্তানকে বাঁচাতে পারে মোদির ‘উল্লাস’, ইসলামাবাদকে পরামর্শ আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কের
আদালত কক্ষ। কাঠগড়ায় অপরাধী। সামনে এক বা একাধিক বিচারপতি বসে। তাঁদের মুখোমুখী দাঁড়িয়ে সওয়াল করছেন দুই আইনজীবী। একজন বাদী, অন্যজন বিবাদী। ডাকা হচ্ছে একের পর এক সাক্ষী। তাঁদের জন্য প্রশ্নবান তৈরি করে রেখেছেন দুই আইনজীবীই। দুজনেই মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন নিজের মক্কেলকে নির্দোষ প্রমাণ করার। মাঝে মধ্যে বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করেও মন্তব্য করছেন তাঁরা। পালটা বিচারপতির প্রশ্ন থাকলে জবাবও দিচ্ছেন। দুপক্ষের সওয়াল জবাব শেষে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করছেন বিচারপতি। এ দৃশ্য আমাদের কমবেশী চেনা। সামনে থেকে না হোক, সিনেমা বা সিরিয়ালে আদালত কক্ষের অন্দরমহল হামেশাই দেখানো হয়। তবে বাস্তবের কোর্ট রুম ডুয়েল হুবহু এক নয়। বর্তমানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা থাকে। শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন মামলাও লাইভ দেখতে পান যে কেউ। কোথাও যেন অস্বচ্ছতা না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা চালু হয়। প্রথমবার সেই দাবি উঠেছিল ২০১৮ সালে। মামলাটি ছিলে শীর্ষ আদালত বনাম স্বপ্নীল ত্রিপাটি ও অন্যান্যর। এই মামলায় পরীক্ষামূলকভাবে লাইভ সম্প্রচারের অনুমতি দেয় আদালত। তখন অবশ্য সুপ্রিম বিচারপতি ছিলেন দীপক মিশ্র। বর্তমান প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ও ছিলেন সেই মামলার বিচারপতিদের বেঞ্চে। সুপ্রিম কোর্টের লাইভ সম্প্রচার শুরু হয় তার কয়েক বছর পর। ২০২১ সালে শুরু হয় লাইভ সম্প্রচার। এরপর থেকে নির্বাচিত কিছু মামলার সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দেয় আদালত। ২০২৪ সালে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জাতীয় পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মামলার লাইভ সম্প্রচারের অনুমতি দেন। যার মধ্যে অন্যতম নিট দুর্নীতি। সম্প্রতি আর জি কর মামলাও লাইভ সম্প্রচারিত হচ্ছে। সেদিকে নজর রেখেছেন গোটা দেশের মানুষ।
আরও শুনুন:
‘প্রধান বিচারপতির বাড়িতে কেন মোদি?’ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ডাক্তারদের হয়ে লড়বেন সেই আইনজীবীই
কোন মামলা লাইভ সম্প্রচারের অনুমতি পায়?
মূলত জাতীয় পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ এই ধরনের মামলাই লাইভ সম্প্রচারের অনুমতি পায়। এছাড়া জনস্বার্থ মামলাও অনেক সময় সম্প্রচারিত হয় সরাসরি। ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িয়ে এমন মামলা সাধারণত অনুমতি পায় না সম্প্রচারের।জনস্বার্থ মামলা হিসেবেই আর জি করের ঘটনা এই অনুমতি পেয়েছে। আর সেই যুক্তি দেখিয়েই লাইভ সম্প্রচার নিয়ে কপিল সিব্বলের আপত্তি খারিজ করেন প্রধান বিচারপতি। শুধু সুপ্রিম কোর্ট নয়, হাই কোর্ট ও বিভিন্ন নিম্ন আদালতে শুনানির সরাসরি সম্প্রচারের নিয়ম রয়েছে। বিশ্বের আরও অনেক দেশেই এ ব্যবস্থা চালু আছে। তার মধ্যে, কানাডা, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া এমনকি মার্কিন মুলুক রয়েছে। নেপথ্যের কারণ মোটামুটি এক। বিচারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।