উঁচু জাতের ছেলের নামে যৌন হেনস্তার অভিযোগ! এহেন সাহসের জেরেই একঘরে হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে ৫০টি দলিত পরিবারকে। যে ঘটনা ফের বুঝিয়ে দিচ্ছে, ধর্ষণের কঠোর শাস্তির দাবি উঠলেও ধর্ষণ সংস্কৃতি বদলাচ্ছে না।
একদিকে ধর্ষণের প্রতিবাদে এককাট্টা আন্দোলন, ধর্ষণ রুখতে কঠোর আইনের দাবি, অন্যদিকে ধর্ষণ-নির্যাতনের ধারাবাহিক সংস্কৃতি- এই আমাদের দেশ। এত বাদ-প্রতিবাদের পরেও সেখানে ধর্ষণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত। আর একইভাবে বহাল ধর্ষিতার মুখ লুকোনোর নিদানও। ধর্ষক নয়, এ সমাজ ধর্ষিতাকেই লজ্জা পেতে শেখায়। আর অন্যথা হলে সেই সমাজই উগরে দেয় ক্রোধ। সম্প্রতি সামনে এসেছে তেমনই এক ঘটনা। যেখানে উঁচু জাতের এক যুবকের নামে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করার দায়ে একঘরে হয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে গোটা গ্রামের সবগুলি দলিত পরিবারকে।
জানা গিয়েছে, উত্তর কর্নাটকের ইয়াদগির জেলায় ঘটেছে এ ঘটনা। এক নাবালিকা দলিত মেয়ের হেনস্তার প্রতিবাদে সরব হতেই পালটা দলিত পরিবারগুলিকে সহবত শেখাতে তৎপর হয়েছে তথাকথিত উঁচু জাতের মানুষেরা। জানা যাচ্ছে, বছর ১৫ বয়েসের ওই কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ২৩ বছরের এক যুবকের, সামাজিকভাবে যে উঁচু জাতের। মেয়েটিকে সে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। কিন্তু কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় সে কোনও দায় নিতেই অস্বীকার করে। মেয়েটির বাড়ির তরফে কথা বলা হলেও কোনও লাভ হয়নি। অগত্যা পকসো আইনে ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে কিশোরীর বাড়ির লোক।
আর এতেই চটে লাল এলাকার উঁচু জাতের মানুষেরা। মেয়েটির মা-বাবাকে ডেকে আপস রফার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ন্যায়বিচারের দাবিতে অনড় মেয়েটির পরিবার। তাই মামলা তুলতেও নারাজ তারা। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যুবককে গ্রেপ্তার করে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। তার শাস্তি হিসাবেই উঁচু জাতের সর্দারদের নিদান, শুধু ওই পরিবারটিকে নয়, গ্রামের সব দলিত পরিবারকেই সামাজিকভাবে বয়কট করা হবে। প্রায় মাসখানেক ধরে মুদির দোকান থেকে সেলুন, মন্দির বা যে কোনও জমায়েতেই আনাগোনা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে গ্রামের ৫০ ঘর দলিতের। তাঁদের অপরাধ, তাঁরা একটি অন্যায়ের ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।
কোনও একটি ধর্ষণের ঘটনা যখন নৃশংসতার মাত্রা ছাড়িয়ে অনেক দূর সাড়া ফেলে, তখনই ধর্ষণ-নির্যাতনের ধারাবাহিকতা নিয়ে কথা হয়। ধর্ষণবিরোধী কড়া আইন আনা হোক, ধর্ষককে ফাঁসি দেওয়া হোক- চটজলদি নানা সমাধানের দাবিও ওঠে। কিন্তু ধর্ষণের নেপথ্যে যে মানসিকতা কাজ করছে, সেই মানসিকতাকে উপড়ে ফেলার জন্য যে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করে যেতেই হবে, তা নিয়ে সেভাবে কথা হয় না। যার দরুন এ ধরনের মানসিকতা কোথাও না কোথাও জাঁকিয়ে বসেই থাকে। কর্নাটকের এই ঘটনা আরও একবার নতুন করে বুঝিয়ে দিল, যতই ধর্ষণবিরোধী কঠোর আইন পাশ হোক, ধর্ষণ সংস্কৃতি কিন্তু রয়ে গিয়েছে তার নিজের অবস্থানেই।