শক্তিপূজায় লালফুল আবশ্যক। দুর্গাপুজোতেও সে নিয়ম মানতেই হয়। তবে স্রেফ লাল ফুল নয়। আরও এক ফুল রয়েছে, যা না থাকলে দুর্গাপুজো অসম্ভব। এই ফুলের রঙও আলাদা। কোন ফুলের কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বছরঘুরে মর্তে ফিরবেন উমা। শহর-গ্রাম মেতে উঠবে দেবীর আরাধনায়। মহামায়ার এই পুজো মোটেও সহজ নয়। কোথাও এতটুকু ভুল হওয়ার জায়গা নেই। নিখুঁত আয়োজন সারতে হবে পুজোর। তবেই না তুষ্ট হবেন দেবী। আর এখানেই উঠে আসে এমন কিছু বিশেষ সামগ্রীর কথা, যা না থাকলে দুর্গাপুজো অসম্ভব।
বাঙালির প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী দুর্গাপুজো ৫ দিনের। দেবীর বোধন হয় ষষ্টীতে। তারপর সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিন দিন দেবীর প্রধান পুজো। সবশেষে দশমীতে বিসর্জন। এর মধ্যে প্রতিটা দিনের আলাদা বৈশিষ্ট্য। যেমন সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান। অষ্টমীতে কুমারী পুজো এবং অঞ্জলি। দুর্গাপুজোর বাকি দিনগুলোতে অঞ্জলি হলেও অষ্টমীর অঞ্জলির গুরুত্ব কিছুটা আলাদা। এরপর নবমীতে হোম। কোথাও কোথাও নবমীতে কুমারী পুজোর চল রয়েছে। কিংবা সন্ধিপুজোর সময় বলিদান হতে দেখা যায়। সন্ধিক্ষণের এই বিশেষ পুজোয় দেবীকে ১০৮ পদ্ম নিবেদনের নিয়ম রয়েছে। বাড়ির পুজো বা মন্দিরে এই নিয়ম কঠোরভাবে মানা হয়। কিন্তু সব মণ্ডপে এই নিয়ম মানা হয় না। স্রেফ পদ্ম নয়, দেবীকে আরও এক বিশেষ ফুল না দিলেই নয়। শাস্ত্রে দেবীর আরেকরূপের বর্ণনা মেলে। ইনি দেবী অপরাজিতা। দশমীতে ঘট বিসর্জনের পর এই দেবীর পুজো হয় দুর্গামূর্তির সামনে। আলাদা কোনও মূর্তি নেই। অপরাজিতা ফুল আর ডালপালা সাজিয়েই পুজো করা হয় দেবীর এই বিশেষ রূপের। আর সেই সূত্র ধরেই দেবী পূজায় নীল অপরাজিতা আবশ্যক। পুজোর চারদিনই এই নীল ফুল দেবীকে অর্পন করতে হয়। অনেকে অপরাজিতা মালাও দুর্গাকে নিবেদন করেন। এতেও বিশেষ তুষ্ট হন দেবী। এছাড়া শমী গাছ বা লজ্জাবতী গাছের পাতা দেবীর বিশেষ পছন্দের বলা হয়। তাই দুর্গাপুজোয় এই পাতা ব্যবহারের চল রয়েছে বহু জায়গায়।
তবে শাস্ত্রের প্রসঙ্গ বাদ দিলে দেবী দুর্গার সঙ্গে আরও এক ফুলের বিশেষ যোগ লক্ষ করা যায়। মর্তে দেবীর আগমনের আভাস দেয় এই ফুল। কারণ এই ফুল মূলত বছরের একটা সময়েই ফোটে। ঠিক ধরেছেন, কথা বলছি শিউলি ফুল সম্পর্কে। ছোট ছোট সাদা ফুল যা শরতের ভোরে রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। যে ফুলের গন্ধ আগমনীর বার্তা বয়ে আনে। এই ফুলও দেবীর পুজোয় ব্যবহার করা হয়। শিউলির মালা দেবী দুর্গার পছন্দের জিনিস। গ্রামবাংলায় এই ফুল দিয়েই মূর্তি সাজানোর চল রয়েছে। যেহেতু পথেঘাটে পরে থাকে, তাই আলাদা করে পয়সা খরচ করে কিনতে হয় না। আর পরিমানেও অনেকটা পাওয়া যায় শিউলি ফুল। তাই দুর্গাপুজো অন্যতম অঙ্গ হিসেবে এই ফুলকেও না ধরলেই নয়।