কোমরের নীচের অংশ অবশ। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। চলার সঙ্গী হুইলচেয়ার। কিন্তু তাতে কি! শরীরের সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে দেশকে সোনা এনে দিয়েছেন শুটার অবনী লেখারা। তাঁর হাত ধরেই প্যারিস প্যারালিম্পিকে প্রথম সোনা এল ভারতে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
প্যারিস অলিম্পিকে সোনার স্বপ্ন সত্যি হয়নি ভারতের। প্যারালিম্পিক সেই দুঃখ ভুলিয়েছে। গেমসের শুরুতেই শুটিং থেকে এসেছে তিনটি পদক। যার মধ্যে একটি সোনা। প্রতিবন্ধকতা জয় করে দেশকে সোনার স্বপ্ন দেখিয়েছেন অবনী লেখারা। তবে হুইলচেয়ারে বসে সোনার পদক জয় মোটেও সহজ ছিল না।
টোকিও অলিম্পিকে সোনা জিতেছিলেন নীরজ চোপড়া। প্যারিসেও তাঁর উপরই ভরসা রেখেছিলেন গোটা দেশের মানুষ। কিন্তু স্বপ্ন সত্যি হয়নি। পাকিস্তানের আর্শাদ নাদিমের কাছে হেরে রুপো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে নীরজকে। একইভাবে কুস্তিতে সোনা জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছেছিলেন বিনেশ ফোগত। তীরে এসে তরী ডোবে তাঁরও। শেষ পর্যন্ত সোনা ছাড়াই দেশে ফিরতে হয় ভারতীয় অ্যাথলিটদের। তবে অলিম্পিক শেষ হতে না হতেই প্যারিসে বসেছে প্যারালিম্পিকের আসর। সেখানেও রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়ে হাজির হয়েছেন ভারতের প্যারা অ্যাথলিটরা। ইতিমধ্যেই তাঁদের হাত ধরে এসেছে সোনার পদক। প্যারালিম্পিকে দেশকে প্রথম সোনা এনে দিয়েছেন অবনী লেখারা। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের SH1 ইভেন্টে সোনা জিতেছেন তিনি। ওই একই ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন ভারতের মোনা আগরওয়াল। তবে অবনীকে নিয়ে মাতামাতির কারণ রয়েছে আরও। এর আগে টোকিও প্যারালিম্পিকেও সোনা জিতেছিলেন অবনী। আরও একবার সোনা জিতে ইতিহাস গড়লেন ভারতের তারকা প্যারাশুটার।
প্যারালিম্পিকে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ অ্যাথলিটরেই জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকে। অবনী এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। একেবারে সুস্থ স্বাভাবিক ছোটবেলা কেটেছে তাঁর। কোনওরকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল না। জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা। ২০১২ সালের দুর্ঘটনায় শিরদাঁড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় অবনীর। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। কোমরের নীচের অংশ অবশ হয়ে যায়। সেই থেকে সঙ্গী হুইলচেয়ার। হটাৎ আসা এই ঝড়ে মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েন অবনী। জীবনের মূলস্রোতে ফিরে আসবেন, এই আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। মেয়ের অবস্থা থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন অবনীর বাবাও। তবে মেয়েকে সে কথা বুঝতে দেননি। বরং কীভাবে অবনীকে সুস্থ করা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। খেলাধুলার জগতেও অবনীর পা রাখা বাবার হাত ধরেই। প্রথমে মেয়েকে তিরন্দাজিতে ভর্তি করে দেন। কিন্তু সেদিকে মন ছিল না অবনীর। বন্দুক হাতেই তিনি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। সেই থেকে শুরু শুটিং প্রশিক্ষণ। টানা ৫ বছরেই শুটিংয়ে নিজের জাত চানিয়েছিলেন অবনী। ২০১৭ সাল থেকে তাঁর পদক যাত্রা শুরু। একাধিক আন্তজার্তিক সাফল্য তাঁকে পরিচিতি দেয়। এরপর ২০২০ সালের টোকিও প্যারালিম্পিকে সোনা জিতে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন অবনী। ঠিক পরের প্যারিস প্যারালিম্পিকেও সোনা জিতেছেন অবনী। এই মুহূর্তে তাঁর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গোটা দেশ। ক্রীড়ামহলও অবনীকে কুর্নিশ জানিয়েছে। সতীর্থরা তো বটেই, দেশের আরও অনেক তারকা খেলোয়াড় অবনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন প্যারিস অলিম্পিকে শুটিংয়ে ব্রোঞ্জজয়ী মনু ভাকেরও।