যখন পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশের প্রায় সব মহিলারা সোচ্চার, তখন অনেকেই খতিয়ে দেখছেন সুপারস্টার রাজেশ খান্নার এই বক্তব্য। একজন পুরুষ স্বামী হিসাবে একরকম ভাবছেন, বাবা হিসাবে বদলে যাচ্ছে তাঁর ভাবনা।
মেয়ে কাজ করুক, স্বনির্ভর হয়ে উঠুক। চাইছিলেন বাবা। মেয়ের প্রশ্ন, ‘তাহলে মা যখন কাজ করতে চাইছিল, করতে দেওয়া হল না কেন?’ এই কথোপকথন যাঁদের, তাঁদের একজন সুপারস্টার। স্বয়ং রাজেশ খান্না। অন্যজন, তাঁরই মেয়ে টুইঙ্কল খান্না। অভিনেত্রী এবং লেখিকা হিসাবে যিনি সুবিদিত। আর যাঁকে নিয়ে এই কথাবার্তা, তাঁকে তো সকলেই চেনেন- ডিম্পল কাপাডিয়া। সংসার সামলাতে গিয়ে যাঁকে কাজ ছাড়তে হয়েছিল। অভিনয় কেরিয়ারের একেবারে গোড়াতেই প্রায় এক দশকের বিরতি নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
আরও শুনুন:
মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রিতে সরব অভিনেত্রীরা, সাহস জোগাবে অন্য কর্মক্ষেত্রের মহিলাদেরও?
কারণ? তাঁর স্বামী। এবং সংসার। সন্তান-সন্ততিকে বড় করার দায়িতে কেরিয়ারের থেকে তখন বড় হয়ে উঠেছিল। অন্তত তাঁর সুপারস্টার স্বামী সেরকমটাই চেয়েছিলেন। সেই ইচ্ছের কাছে একরকম হার মানতে হয়েছিল অভিনেত্রীকে। রাজেশ-ডিম্পলের যখন বিয়ে হয়, তখনও ‘ববি’ সিনেমা মুক্তি পায়নি। এর মধ্যেই বিয়ে, সন্তান এবং সংসার। স্বামী রাজেশ খান্না চেয়েছিলেন, ডিম্পল সন্তানের দেখাশোনা করুক। অনেক পরে, এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, সে সময় তিনি চাননি যে তাঁর সন্তান গৃসহায়কদের হাতে বড় হোক। তবে, তা বলে তিনি অবশ্য নিজে কাজ ছাড়েননি। ফলত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল ডিম্পলকে। রাজেশ-দিম্পলের বিয়ে অবশ্য সুখের হয়নি। তবে, তাঁদের মেয়ে টুইঙ্কল খান্না যখন বড় হয়ে ওঠেন, তখন রাজেশ চাইছিলেন যে, টুইঙ্কল অভিনয় জগতে পা দিক। আর তাতেই অবাক টুইঙ্কল প্রশ্ন করেছিলেন, তাহলে মাকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি কেন? কেনই বা তাঁর কাজ করার ক্ষেত্রে কোনও আপত্তি নেই বাবার? রাজেশ জানিয়েছিলেন, কেননা টুইঙ্কলের তিনি স্বামী নন, বাবা।
আরও শুনুন:
রাতের দখল নিয়েছিল ‘রাগী’ মেয়েরা, সিনেমাও দেখিয়েছে ‘অ্যাংরি ইয়াং উইমেন’
অনেকদিন পরে সেই পুরনো সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ আবার উঠে এসেছে। যখন পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশের প্রায় সব মহিলারা সোচ্চার, তখন অনেকেই খতিয়ে দেখছেন সুপারস্টার রাজেশ খান্নার এই বক্তব্য। একজন পুরুষ স্বামী হিসাবে একরকম ভাবছেন, বাবা হিসাবে বদলে যাচ্ছে তাঁর ভাবনা। সন্তানের সাফল্য কোন বাবা না চাইবেন! আর এই সময়ে দাঁড়িয়ে, সমাজের উপরমহলে ঘোরাফেরা করা একটি পরিবারে ছেলে মেয়ে দুজনকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সেভাবে পার্থক্য থাকার তো কথা নয়। ফলে সেখানে ছেলে কিংবা মেয়ের সাফল্যের দিকে লক্ষ্য রেখেই তাদের বড় করে তুলছেন বাবা। সেই সাফল্যের পথে কোনও বাধা তাঁর কাছে মান্যতাও পাবে না। কিন্তু স্ত্রীর ক্ষেত্রে সাফল্যের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে পারিবারিক সুবিধা-অসুবিধার প্রসঙ্গটি। সেই সুবিধা-অসুবিধাকে স্ত্রীর সামনে বাধা হিসেবেই দাঁড় করাচ্ছেন, এবং সেই নিরিখেই তাঁর কাজ করা বা না-করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন স্বামী। অথচ তাঁরা দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক, সেখানে একজনের হয়ে অন্যজনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও ছিল না। ভারতীয় পরিবারের পরিসরে স্বামীর এহেন আচরণ কিন্তু মান্যতাই পেয়ে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। কিন্তু সেখানেও যে সূক্ষ্মভাবে লিঙ্গবৈষম্যই লুকিয়ে রয়েছে, রাজেশ খান্নার এই বক্তব্য তাকেই চিনিয়ে দিয়ে যায়।