বাড়াতে হবে রিচ। এটাই একমাত্র লক্ষ্য। তাতে কেউ অস্বস্তিতে পড়ুক, কারও সমস্যা হোক, কুছ পরোয়া নেহি। দেদার চলবে রিল আপলোড। আচ্ছা, সোশাল দুনিয়ার এই তুমুল জনপ্রিয় ট্রেণ্ড শেষ হবে না?
মাটিতে বসে আছেন মহিলা। চোখে মুখে বিষাদের ছাপ। সামনে আর জি করের মৃত চিকিৎসকের ছবি। মহিলার দু হাতে লাল রং। হঠাৎ বাজতে শুরু করল গান। শোকসঙ্গীত। কিন্তু তাতেই তাল মিলিয়ে অভিনয় শুরু করলেন মহিলা। প্রায় ১ মিনিট ধরে চলল অভিনয়। শেষে দু হাতের লাল রং মুখে মাখলেন মহিলা। কেঁদেও ফেললেন প্রায়…
:আরও শুনুন:
ঘনিষ্ঠতার মেট্রো-মঙ্গল কাব্য! ভাইরাল হওয়ার কালচার বনাম কালচার শক
সিনেমা নয়। এ দৃশ্য রিলের। যদিও স্রেফ রিল বললে ভুল হয়, বিগত কয়েকদিনে সোশাল মিডিয়ায় এই রিল বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। সহজ করে বললে ভাইরাল হয়েছে। তাতে নানা মুনির নানা মত ভেসে এসেছে। কেউ কেউ আবেগে ভেসে মন্তব্য করেছেন, ‘বিচার চাই’। কেউ আবার কমেন্ট বক্সে প্রশাসনের নজর টেনেছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন, মৃত চিকিৎসকের ছবি ব্যবহারে আদালতের কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যদিও যিনি এই রিল আপলোড করেছেন, তাঁর এইসব মন্তব্য নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তিনি স্রেফ চেয়েছেন রিচ বাড়ুক। বর্তমান পরিস্থিতে এমনটা করলে সেই রিচ বাড়তে পারে বলেই তিনি ভেবেছিলেন। বাস্তবে হয়েওছে তাই। ভালো-খারাপ যেভাবেই হোক, সবাই ভিডিওটি দেখেছেন। শেয়ার করেছেন। আরও ১০ জনকে দেখিয়েছেন।
:আরও শুনুন:
ধর্ষণ-খুনের শিকার চিকিৎসক তরুণী, ধৃত সঞ্জয়ের পক্ষে লড়ছেন এক মহিলা আইনজীবীই
উদাহরণ একটা নয়, কয়েক হাজার রয়েছে। আরও বেশি বললে ভুল হয় না। যে কোনও ইস্যু, তা নিয়ে সামান্য আলোড়ন হলেই শুরু হয়ে যাবে রিলের বন্যা। শুধু ঘটনা কেন, দুর্যোগে পর বিধ্বস্ত এলাকা কেমন দেখতে লাগে, তা নিয়েও রিল রয়েছে। কীভাবে ভোট দিতে হয়, সেও রিল দেখে শিখে নেওয়া যাবে। বাদ যায়নি ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টও। একদল যেমন এইসব তৈরি করছেন অন্যদল তেমনই বসে বসে সেই রিল দেখছেন। আলোচনা করছেন। এমন রিল বন্ধ হোক সেই দাবিও তুলছেন। কিন্তু উপেক্ষা করছেন না। বলা ভালো, উপেক্ষা করতে পারছেন না। অনেকের সোশাল মিডিয়া শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়। বিনোদনের অন্যতম পীঠস্থানও বটে। এমন অনেকেই রয়েছেন যারা আজকাল টিভি অবধি দেখেন না। সে জায়গায় ৯০ সেকেন্ডের ১০-১২ টা রিল দেখা হয়ে যাবে। তাতে সিরিয়াল থাকবে, গান থাকবে, জ্ঞান থাকবে, মৃত চিকিৎসকের ছবিও থাকবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রিলের এই বাড়বাড়ন্ত কেন?
:আরও শুনুন:
কাঁদছেন মা দুর্গা, তবু বধ তিন অসুরকে… খুদে শিল্পীর ভাবনা ভাবাচ্ছে সময়কে
সহজ উত্তর, অতিরিক্ত রোজগারের আশায়। সোশাল মিডিয়ার অধিকাংশ মাধ্যমেই রিল বা ভিডিও পোস্ট করে রিচ বাড়ানো যায়। তাতে রোজগারও হয় ভালমতো। কিন্তু স্রেফ রোজগারের জন্যই কি এতকিছু? বোধহয় না। কোথাও গিয়ে রিল তৈরি নেশার মতো হয়ে গিয়েছে অনেকের কাছেই। বিশেষজ্ঞরাও এই নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তাঁদের মতে, রিলের দাপটে সবথেকে বেশি প্রভাবিত হচ্ছেন পড়ুয়ারা। একদিকে যেমন রিল তৈরি করে রোজগারের নেশা। ঠিক ভুলের বিচারবুদ্ধি হারিয়ে নিজেদের যা মনে হচ্ছে সেটাই করছেন তাঁরা। অন্যদিকে রিল দেখতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। এই সময়ে কয়েকশো রিল দেখা হচ্ছে। কিন্তু কোন রিলে কী ছিল তা জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিতে পারবেন না অনেকেই। মূল সমস্যাটা এখানেই। মনোবিদরা বারবার বলছেন, মনঃসংযোগ নষ্ঠের অন্যতম প্রধান কারণ এই রিলের বাড়বাড়ন্ত। তিলে তিলে সময় গ্রাস করছে এই রিল। টের পাওয়া যাচ্ছে না ঘুণাক্ষরেও। একইসঙ্গে রিল বানাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেকে। মৃত্যু অবধি ঘটেছে। তবু এ নেশা যেন কাটার নয়। প্রতিনিয়ত আরও চেপে বসছে। ভবিষ্যৎ হয়তো আরও ভয়ঙ্কর! তাতে কেউ অসহায় বোধ করুক, অস্বস্তিতে পড়ুক, কুছ পরোয়া নেহি!