মৃত মানুষের সঙ্গে কথা বলা যাবে। তাও আবার টেলিফোনে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। রয়েছে এমন ব্যবস্থাও। তাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অকালে চলে যাওয়া প্রিয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন কেউ কেউ। ঠিক কোথায় রয়েছে এমন ব্যবস্থা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
নেই। একটা মাত্র শব্দ। কিন্তু কী ভীষণ শক্তিশালী। মুহূর্তে বদলে দিতে পারে চারপাশ। এক লহমায় পায়ের তলার মাটি সরিয়ে দিতে পারে। অথচ প্রত্যেককেই জীবনে এক বা একাধিকবার শুনতে হয়, নেই। কখনও বাবা, কখনও মা, কখনও প্রেমিক, প্রেমিকা কিংবা ভীষণ কাছের কেউ। চিরতরে বিদায় নিয়েছেন পৃথিবী থেকে। হাজার চেষ্টা করলেও তাঁদের সঙ্গে আর কথা বলা হয়ে উঠবে না। হাজার ফোন করলেও এঁরা ফোন তুলবেন না।
আরও শুনুন: ধর্ষককে লজ্জা দাও! কীভাবে শুরু হয়েছিল এই আন্দোলন?
এই মুহূর্তে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুতে উত্তাল গোটা দেশ। বিচারের দাবিতে পথে নামছেন শিল্পী, গায়ক, অভিনেতারা। নেটদুনিয়ায় এই নিয়ে হাজার হাজার লেখা, ছবি, গান ঘুরছে। সেই ভিড়ে রয়েছে একাধিক দাবি। যার মধ্যে একটা দাবি বেশ নজর কাড়ে। জনৈক ব্যক্তি লিখছেন, যদি মৃতার সঙ্গে একবার কথা বলতে পারতাম! সত্যি যদি এমনটা সম্ভব হতো? একবার, স্রেফ একবারের জন্য… বিজ্ঞানমতে এমনটা সম্ভব নয়। কেউ কেউ প্ল্যানচেটের কথা বলেন। তারও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বা যুক্তি মেলে না। যে মানুষ আর নেই, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ কড়া সম্ভব নয় বলেই দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু আবেগ তো বিজ্ঞানের যুক্তি মানে না। প্রিয় মানুষটা আর নেই, একথা বছরের পর বছর কেটে গেলেও বিশ্বাস করতে চান না অনেকেই। তাঁদের জন্য রয়েছে এক বিশেষ টেলিফোন। যার মাধ্যমে মৃতদেহের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব। পোশাকি নাম ‘উইন্ড ফোন’। এর সঙ্গে কোথাও কোনও তার বা নেটওয়ার্ক যোগ কড়া নেই। সিম কার্ড বা ওয়াইফাইও নেই। তাহলে, ফোন যায় কীভাবে? সে উত্তর নেই। আছে শুধু বিশ্বাস। ব্যবহারকারীরা মনে করেন, কেবলমাত্র মনের বিশ্বাস থাকলেই ওপার থেকে মৃত প্রিয়জনের গলার স্বর শোনা যায়।
আরও শুনুন: কোটা আন্দোলনে শহিদ, পরীক্ষা হলে ‘ফুল’ হয়ে সহপাঠীদের পাশে বাংলাদেশের ছাত্র
প্রথমবার এই উইন্ড ফোন তৈরি করেন জাপানের এক ব্যক্তি। ২০১০ সালে নিজের বাড়ির বাগানে একটি টেলিফোন রেখে এমন দাবি করেন তিনি। অন্য কারও জন্য নয়, নিজের ব্যবহারের জন্যই এই ফোন ব্যবহার করতেন তিনি। বলতেন, এই ফোনের মাধ্যমে নিজের মৃত ভাইঝির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। হাওয়ায় হাওয়ায় সেই বার্তা পৌঁছে যায় অন্য কোথাও। সেখান থেকে ভেসে আসে প্রত্যুত্তর। কোনও সময়ের বাঁধন নেই। যতক্ষণ খুশি কথা বলা যায়। যতবার খুশি কথা বলা যায় ছেড়ে চলে যাওয়া প্রিয় মানুষটির সঙ্গে। কিন্তু এর ঠিক একবছরের মাথায় ভয়ংকর সুনামি আর ভূমিকম্পের কবলে পড়ে জাপান। প্রাণ হারান ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। শেষবারের জন্য কাছের মানুষকে বিদায় না জানিয়েই চলে যেতে হয় কতজনকে। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই সকলের মুখে ছড়িয়ে পড়ে উইন্ড ফোনের কথা। সকলে ভিড় জমাতে শুরু করেন। ইচ্ছা একবারের জন্য প্রিয় মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। উত্তর আসবে কি না, জানা নেই। স্রেফ বিশ্বাসে ভর করেই ফোন করতে ছুটে আসতেন। এইসময় আর কাউকে আটকাতেন না ফোনের মালিক। জানা যায়, সুনামির পর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই টেলিফোন ব্যবহার করেছেন। যদিও একসময় রোদে-জলে এই উইন্ড ফোন নষ্ট হয়ে যায়। তারপর এর প্রতিরূপ তৈরি হয় বিশ্বের নানা প্রান্তে। তাতে আদৌ মৃত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কড়া যেত কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু নিজেদের বিশ্বাসে ভর করেই, সবাই ছুটে যান একবারের জন্য চলে যাওয়া প্রিয় মানুষটির গলা শুনবেন বলে।