সময় ধরে কাজ করতে পছন্দ করেন অনেকেই। কারও আবার সময়ের কড়াকড়ি না পসন্দ। তবে এমনও এক জায়গা রয়েছে যেখানে সময় মেনে চলার বালাই নেই! সেখানকার বাসিন্দারা কেউ ঘড়ি ব্যবহার করেন না। সময় মেনে চলার অভ্যাসই নেই কারও। কোন জায়গার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পরীক্ষা হোক বা চাকরির ইন্টারভিউ, সময় মতো পৌঁছতে না পারলে বিপদ। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানেও সময় নিয়ে বেশ কড়াকড়ি থাকে। ঠিক সময় না পৌঁছলে ঢোকার অনুমতিই মিলবে না। তবে পৃথিবীর সর্বত্র এই নিয়ম মানা হয় না। এমনও এক জায়গা রয়েছে, যেখানে সময়ের অস্তিত্ব নেই বললেও ভুল হয় না।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি! এখানকার বাসিন্দারা সময়ের ধার ধারেন না। যখন যা ইচ্ছা তাই করেন। কোনও কিছুর জন্য নির্দিষ্ট সময় নেই। ইচ্ছা হলে ঘুমোন, ইচ্ছা হলে খান, বেড়াতে যাওয়া, খেলতে যাওয়া সবই চলে খেয়াল মতো। কথা বলছি সোমারয় দ্বীপ সম্পর্কে। উত্তর ইউরোপের এই দ্বীপ নরওয়ের অন্তর্গত। খুব বেশি মানুষ এখানে থাকেন না। মেরেকেটে শ’চারেক বাসিন্দা এই দ্বীপের। যারা কোনও ঘড়ি ব্যবহার করেন না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এমন নিয়মের নেপথ্যে কারণ কী?
এককথায় বললে, প্রকৃতির খালখেয়ালিপনা। এমনিতে সময়ের হিসাব হয় সূর্যের অবস্থান ধরে। পূর্বদিকে সূর্যোদয়ের সঙ্গে দিনশুরু, ধীরে ধীরে সূর্য মাথার উপর উঠলে দ্বিপ্রহর, তারপর আবার পশ্চিমে অস্ত যাবেন সূর্যদেব, সময়ের হিসাবে বিকেল পেরিয়ে হবে রাত্রি। কিন্তু যেখানে সূর্য অস্ত যায় না, সেখানে কীভাবে সময়ের হিসাব হবে? নরওয়ের এই দ্বীপেই আসলে এমনটাই হয়। সোমারয় দ্বীপে টানা ৬৯ দিন সূর্য অস্ত যায় না। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে টানা দু মাস মাথার উপর সূর্য দেখতে পান এখানকার বাসিন্দারা। রাতের কোনও অস্তিত্ব নেই। সবসময় চারিদিকে আলো। আবার নভেম্বর থেকে জানুয়ারি অবধি এখানকার আকাশে সূর্যের দেখাই মেলে না। প্রায় তিনমাস আঁধারে ডুবে থাকে গোটা দ্বীপ। সেই কারণেই সময়ের এমন গরমিল। কারও পক্ষে টানা তিনমাস ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব নয়। আবার কেউ টানা তিনমাস জেগেও থাকতে পারেন না। তাই এখানকার বাসিন্দারা রাত হলেই ঘুমোতে হবে এই ধারণায় বিশ্বাস করেন না। তবে দিনের বেলা যে কাজ করা সম্ভব, রাতের আঁধারে সেই সবকিছু করা মুশকিল। তাই বছরের নির্দিষ্ট কয়েকটা মাস বিশেষ কিছু কাজ সেরে রাখেন এখানকার বাসিন্দারা। এই যেমন সাঁতার কাটা, পাহাড়ে চড়া, কিংবা কড়া রোদ দরকার এমন সবকিছুই মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে সেরে রাখেন সকলে। সেক্ষেত্রে সময় মেনে কাজ করা হয় না। এমনও দেখা গিয়েছে, স্থানীয় সময় যখন রাত ১০ টা, তখন সোমারয়ের কেউ পাহাড়ে চড়ছেন। এছাড়া এখনকার বেশিরভাগ মানুষ মৎস্যজীবী। তাঁরাও দিন থাকতে থাকতেই বেশি কাজ সেরে রাখেন। শোনা যায়, এই দ্বীপকেই বিশ্বের প্রথম ‘টাইম ফ্রি জোন’-এর আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। এই নিয়ে গোটা বিশ্বে শোরগোল পরে যায়। বর্তমানে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে এই দ্বীপ। সময়ের হিসেব না মেনে কয়েকটা দিন কাটাতে, এখানে ছুটে যান অনেকেই।