অলিম্পিক থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে বিনেশকে। কুস্তিগিরকে রুপো দেওয়ার যে দাবি উঠেছিল, সেটিও নাকচ করে ক্রিড়া আদালত। তবে দেশে ফিরে এমন এক সম্মান বিনেশ পেয়েছেন, যাতে অপ্রাপ্তির ক্ষতে খানিক প্রলেপ পড়ছে বইকী! আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পুরস্কার কিংবা সম্মানের বিচার মূল্য দিয়ে হয় না! প্রত্যেকের জীবনেই এমন উদাহরণ রয়েছে। বিশেষ করে খেলোয়াড় কিংবা শিল্পীরা এমন বহু পুরস্কার পেয়েই থাকেন যার বিচার মূল্য দিয়ে হয় না। ঠিক যেমনটা পেয়েছেন বিনেশ ফোগত। অলিম্পিক থেকে খালি হাতে ফিরলেও, গ্রামের এক চৌকিদার তাঁকে যে সম্মান দিয়েছেন, তা সবথেকে বড় প্রাপ্তি বলেই মনে করছেন কুস্তিগির।
:আরও শুনুন:
দেশের মা-বোনদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী, তবে বিনেশের কথা মনে আছে কি?
অলিম্পিকে সোনা জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বিনেশ। কুস্তির ফাইনালে পৌঁছে চমকে দিয়েছিলেন সকলকে। এরপরই রাতারাতি বদলে যায় পরিস্থিতি। বজ্রপাতের মতো খবর আসে- অলিম্পিক্স থেকেই বাতিল বিনেশ। সৌজন্যে একশো গ্রাম বাড়তি ওজন। তার জেরে সোনা তো দূর, অলিম্পিক্স থেকেই বাতিল হন বিনেশ ফোগত। এই নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। রূপোর পদকের যগ্য দাবিদার হিসেবে বিনেশের নামই উঠে আসে বিভিন্ন মহলে। তাঁর হয়ে সওয়াল করেন বিদেশের অ্যাথলিটরাও। বিষয়টি নিয়ে ক্রিড়া আদালতের মামলা হয়। বেশ কয়েকদিন রায় নিয়ে জলঘোলা চলে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিনেশকে পদক না দেওয়ার সিদ্ধান্তই গৃহীত হয় আদালতে। কিন্তু তাতে কী! অলিম্পিকের মঞ্চে যে লড়াই বিনেশ দেখিয়েছেন তা কুর্নিশ জানিয়েছে গোটা দেশের মানুষ। দেশে ফিরতেই বিনেশকে দেখার ভিড় উপচে পরে। কুস্তিগিরকে নিয়ে বিরাট এক সম্বর্ধনা যাত্রার আয়োজন করেন তাঁর গ্রামের মানুষ। পদক না এলেও তাঁর জন্য এমন আবেগী অভ্যর্থনা দেখে স্থির থাকতে পারেননি বিনেশ। কেঁদে ফেলেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসেন বজরং পুনিয়া ও সাক্ষী মালিকদের। চারিদিক থেকে বিনেশের দিকে ফুলের তোড়া এগিয়ে দিচ্ছিলেন সকলে। কেউ কেউ দামি উপহারও এনেছিলেন। তবে এর থেকেও দামি উপহার বিনেশ পেয়েছেন তাঁর গ্রামের চৌকিদারের থেকে। আপাতভাবে দেখলে, উপহারের মূল্য মাত্র ১০০ টাকা। তবে চৌকিদার বিনেশকে যে সম্মান দিয়েছেন, তাঁর বিচার মূল্য দিয়ে হয় না।
:আরও শুনুন:
নজরে সোনা, ২ কেজি ওজন ঝরান ১ ঘণ্টায়! বিনেশ-কাণ্ডের মধ্যেই জানালেন মেরি কম
গ্রামের মেয়েকে, দুনিয়ার সবথেকে সাহসী কন্যা বলেই দাবি করেছেন ওই চৌকিদার। নেপথ্যে বিশেষ কারণও রয়েছে। প্রতিরাতে তিনি যখন গ্রামের চারদিকে রাতজেগে পাহারা দিতেন, তখন তাঁকেও একইভাবে সাহসী বলেই সম্মান জানাতেন বিনেশ। এরপর সময় গড়িয়েছে। নিজের যোগ্যতায় পরিচিত হয়েছেন বিনেশ। অলিম্পিকের মঞ্চেও নিজের জাত চিনিয়ে এসেছেন। তবে চৌকিদারের কাছে তিনি এখনও গ্রামের মেয়েই। তাই পদক আসুক বা না আসুক, তাঁর কাছে বিনেশই সেরা। গ্রামের তরফে বিনেশের জন্য ক্রাউড ফান্ডিং-এর ব্যবস্থা হয়েছিল। সেখানেই ১০০ টাকা দিয়েছেন ওই চৌকিদার। তাতে কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর। বা এই নিয়ে তাঁকে কেউ কটাক্ষও করেনি। বরং নিজের সামর্থ্য মতো তিনি যেভাবে বিনেশকে সম্মান দেখিয়েছেন তার প্রশংসা করেছেন সকলেই।