খাবারে ভেজাল নতুন কিছু নয়। কিছুদিন আগে মশলায় ভেজালের অভিযোগে দেশজুড়ে শোরগোল পড়েছিল। এ দেশের একাধিক নামী মশলার ব্রান্ডকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় বিদেশে। সেই তালিকায় এবার জুড়ল নুন এবং চিনি। অতি প্রয়োজনীয় এই দুই খাদ্যদ্রব্যেও খোঁজ মিলছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের। কী জানাচ্ছে নতুন গবেষণা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
নুন ছাড়া রান্না! এমনটা ভাবাই যায় না। ঠিকমতো নুন না দিলে তরকারীর স্বাদ হবে না। বেশি হলেও বিপদ, কম হলেও সমস্যা। একইভাবে চিনি। সব রান্নাও না হলেও, বিভিন্ন ভারতীয় পদে চিনি দেওয়ার চল রয়েছে। এর পরিমানও স্বাদের হেরফের ঘটাতে পারে অনায়াসে। তবে রান্নায় নুন এবং চিনির ব্যবহারই ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। সাম্প্রতিক গবেষণা অন্তত তেমনটাই বলছে।
এমনিতে নকল বা ভেজাল নিয়ে এখন আর নতুন করে চমকে যাই না আমরা। বরং যে কোনও জিনিসেই কিছু ভেজাল থাকবেই, এমনটাই আমরা মেনে নিয়েছি। তারপরেও, খাবারের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব সতর্ক তো হতেই হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সেই খাবারের দুনিয়াতেই বারে বারে টান পড়ছে। সম্প্রতিই বিদেশের বাজারে নিষিদ্ধ হয়েছিল দেশের নামী সংস্থার গুঁড়ো মশলা। মশলায় ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে, এ কথা শুনে কপালে ভাঁজ পড়েছিল দেশবাসীরও। স্রেফ মশলা নয়, ভেজলের তালিকায় জুড়ল নুন এবং চিনিও। জানা যাচ্ছে, দেশের প্রায় সমস্ত ব্রান্ডেড নুন এবং চিনিতেই মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। তবে তা এতটাই সূক্ষ্ম যে খালি চোখে বোঝা মুশকিল। এদিকে রান্নায় এই ধরনের নুন বা চিনির ব্যবহার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করছে তা বলাই বাহুল্য। মোট ১০ ধরনের নুন এবং ৫ রকমের চিনির নমুনা সংগ্রহ করে এই গবেষনা চালিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাতে সাধারণ নুন চিনির সঙ্গে, বিট লবন, সৈন্ধব লবন কিংবা লাল চিনি সবই ছিল। অনেকেরই ধারণা প্যাকেটজাত নুন বা চিনিতে ভেজাল থাকে। কিন্তু গবেষণা বলছে, স্রেফ প্যাকেটবন্দী নুন-চিনি নয়, বাজারে উপলব্ধ সাধারণ চিনি বা নুনেও একইভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিকের খোঁজ মিলছে। সবথেকে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকছে বিখ্যাত ব্র্যান্ডের আয়োডাইজড নুনে। আয়োডিনের প্রসঙ্গ ধরেই দীর্ঘদিন ধরে এই লবন সংস্থা বিজ্ঞাপন চালায়। এমনকি এই নুনকে দেশের নুন বলেও, পরিচয় দেওয়া হয় বিজ্ঞাপনে। অথচ সেখানেই সবথেকে বেশি পরিমানে মাইক্রোপ্লাস্টিকের হদিশ মিলছে। সে তুলনায় বিট নুনে ভেজালের পরিমাণ কম। এদিকে চিনিতেও একইভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকছে। বিশেষ করে তাৎক্ষনিক এনার্জি মিলবে এমন বিজ্ঞাপন দেখিয়ে যে চিনির গুঁড়ো বিক্রি হয় তাতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ সবথেকে বেশি। কেবলমাত্র ভেষজ চিনি, অর্থাৎ সরাসরি বিট বা আখ থেকে তৈরি কেমিক্যাল বিহীন চিনিতেই বিপদের সম্ভাবনা নেই।
যদিও মশলার মতো নুন-চিনির ব্র্যান্ড নিষিদ্ধ করা হয়নি এখনও। তবে এক্ষেত্রেও যে খুব দ্রুত পদক্ষেপ করা হতে পারে তা অনুমেয়। এই প্লাস্টিক দিনের পর দিন শরীরে প্রবেশ করলে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে পারে। প্রথমদিকে পেটের সমস্যা, হজমের গোলমাল এইসব শুরু হবে। ধীরে ধীরে এর থেকেই বড় রোগ জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। এমনকি ক্ষতিকর এই মাইক্রোপ্লাস্টিক, পাকাপাকি ভাবে নষ্ট করতে পারে পৌষ্টিকতন্ত্র। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে দিতেও এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের জুড়ি মেলা ভার। সবথেকে বড় সমস্যা এর আকার। আনুবীক্ষনিক আকারের কারণে বাইরে থেকে এতটুকু বোঝার উপায় নেই কোন খাবারে এই ভয়ঙ্কর বিষ রয়েছে। আর কোন খাবারে এই বিষ নেই। এদিকে নুন-চিনি ছাড়া রান্নাও অসম্ভব। সেক্ষেত্রে কীভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিক বিহীন নুন বা চিনি বাজারে আনা যায় তা ভাবতে হবে উৎপাদনকারী সংস্থাকে। তবে কোনও সংস্থা যদি ইচ্ছা করে নিজেদের মুনাফা বাড়াতে এমনটা করে থাকে, তাহলেও খোঁজ নেওয়া উচিত। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞ মহলের।