লোকসভা ভোটের আগে অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে গোটা দেশে শোরগোল পড়েছিল। এবার রামের বদলে কৃষ্ণ মন্দির সংস্কারে বিশেষ তৎপরতা দেখাচ্ছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি শাসিত রাজ্যে প্রায় ৩২০০ কৃষ্ণমন্দির সংস্কারের কাজ শুরু করেছে সরকার। কেন এই উদ্যোগ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে তৈরি হয় রামমন্দির। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ টেনে গেরুয়া শিবিরকে তোপ দাগে বিরোধীরা। যদিও লোকসভা ভোটে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার তেমন প্রভাব পড়েনি। অন্তত অযোধ্যায় বিজেপি প্রার্থীর হার তেমনটাই প্রমাণ করেছে। ইতিমধ্যেই রাম ছেড়ে কৃষ্ণ আরাধনায় মেতেছে গেরুয়া শিবির। গোটা মধ্যপ্রদেশ জুড়ে প্রায় ৩২০০ কৃষ্ণ মন্দির সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সে রাজ্যের বিজেপি সরকার।
:আরও শুনুন:
আরাধ্য নন দেবতা! এই মন্দিরে নিয়মিত পুজো পান গান্ধী-সুভাষ
ত্রেতায় যিনি রাম, দ্বাপরে তিনি কৃষ্ণ। যুগে যুগে অবতার রূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন নারায়ণ। তাঁদের ঘিরে রয়েছে হাজারও কিংবদন্তি। কৃষ্ণ, রাম, বুদ্ধ, পরশুরাম…পুরাণের গল্পে প্রতিটি চরিত্রের আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। তবে শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বোধহয় সবথেকে বেশি চর্চা হয়। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীরা কৃষ্ণকেই নারায়ণ রূপে পুজো করেন। দেশজুড়ে কৃষ্ণ মন্দিরের সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। বৃন্দাবন-মথুরা এইসব অঞ্চলই শ্রীকৃষ্ণের লীলাভূম। তাই এখানে কৃষ্ণ মন্দিরের সংখ্যা সবথেকে বেশি। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত বৃন্দাবন-মথুরায় ভিড় জমান। তাই বলে দেশের অন্যান্য প্রান্তে যে কৃষ্ণ মন্দির নেই, তা নয়। মধ্যপ্রদেশের কথাই ধরা যাক। সম্প্রতি সে রাজ্যের বিজেপি সরকার ৩২০০ কৃষ্ণমন্দির সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবকটি মন্দিরের কাছেই এক বিশেষ রাস্তার রয়েছে। স্থানীয় বিশ্বাস, এই পথে ধরেই একদিন শ্রী কৃষ্ণ দ্বারকা গিয়েছিলেন। মাঝে থেমেওছেন বহুবার। সেই স্মৃতিকে সামনে রেখেই এতগুলি মন্দির সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে রাজ্যের সরকার।
:আরও শুনুন:
বর্ষাকালে দেবীর আগমন, ৩০০ বছর ধরে মহিষমর্দিনীর আরাধনায় মাতে কালনাবাসী
সরকারি প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘শ্রী কৃষ্ণ পাথেয়’। শুধু মন্দির নয়, উজ্জ্বয়িনিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথাও ভেবেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। এর সঙ্গেও অবশ্য শ্রীকৃষ্ণের বিশেষ যোগ রয়েছে। জানাযায়, এই শহরেই ছিল শ্রীকৃষ্ণের গুরুকুল। ১২ বছর বয়সে মথুরা থেকে এখানে চলা আসেন মাধব। এখানে থেকেই প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ সম্পূর্ণ করেন। তখনকার দিনে স্কুল কলেজ বলে কিছু ছিল না। গুরুগৃহে থেকে যাবতীয় যা কিছু শিখতে হত। পড়শোনা হোক বা অস্ত্রবিদ্যা, সবই শেখাতেন এই গুরুরা। মানব অবতারে কৃষ্ণকেও সেই কাজ করতে হয়েছে। সুতরাং মধ্যপ্রদেশও একইসময় কৃষ্ণলীলার সাক্ষী থেকেছে একথা বলাই যায়। সেইসব কিংবদন্তি নতুন করে সবার সামনে তুলে ধরতে সরকারের এই নতুন উদ্যোগ। প্রতিটি কৃষ্ণ মন্দিরই বিশেষ ভাবে সাজানো হবে। আগামীদিনে পর্যটক বা কৃষ্ণ ভক্তদের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে এই রাজ্যকে দেখতে চাইছে গেরুয়া শিবির। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।