নিজেদের দাবি আদায়ে বারবার পথে নামতে হয় এ দেশের কৃষকদের। বিগত কয়েক বছরে দু-দুবার কৃষক আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে মোদি সরকার। কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে মোদিকে বিঁধেছেন বিরোধীরাও। অথচ সেই মোদিই কিনা কৃষকদের মাথায় ছাতা ধরছেন। খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনাও করছেন। ব্যাপারটা কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
‘রাজা সবারে দেন মান, সে মান আপনি ফিরে পান’… রবিঠাকুরের এ গান সকলের চেনা। স্রেফ গানের কথা নয়। এ এক বাস্তব সত্যও বটে। সম্মান দিলেই প্রকৃত সম্মান মিলবে, তা অস্বীকারের উপায় নেই। সম্প্রতি এমনই এক ছবি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কৃষকদের মাথায় ছাতা ধরে দাঁড়িয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গণতান্ত্রিক দেশে আক্ষরিক অর্থে কেউ রাজা নন। তবে ক্ষমতার বিচারে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই অনেকটা উঁচুতে বসেন। কাজেই প্রধানমন্ত্রী কারও মাথায় ছাতা ধরছেন এমন ঘটনা বিরলই বটে।
কৃষিপ্রধান দেশে এমন ছবি অস্বাভাবিক নাই হতে পারত। কিন্তু মোদি সরকার যেভাবে কৃষক আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে তাতে এমন কিছু আশা করা কঠিন। কখনও আন্দোলন এতটাই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে, তা দমাতে কড়া পদক্ষেপ করতে হয়েছে কেন্দ্রকে। সেই ছবি আমরা দেখেছি। সেই ছবি গোটা দেশ দেখেছে। একদিকে কৃষকদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। অন্যদিকে বিরোধী শিবির আঙুল তুলেছে সরকারের দিকে। নিশানায় বারবার উঠে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। কেউ কেউ সরাসরি মোদিকে ‘কৃষকবিরোধী’ তকমাও দিয়েছেন। তবে এবার খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই দেখা গেল অন্য ভূমিকায়। কৃষকদের বিরুদ্ধে নয়, তাঁদের সঙ্গে মিশে থাকতেই দেখা গিয়েছে মোদিকে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন প্রধানমন্ত্রী। বদ্ধ ঘরে নয়, খোলা মাঠেই আয়োজন হয়েছিল বৈঠকের। আলোচনার মাঝে হঠাৎ বৃষ্টি নামে। আর তখনই কৃষকদের মাথায় ছাতা ধরতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। বারবার বলা সত্ত্বেও বৈঠক থামাতে রাজি হননি প্রধানমন্ত্রী। যেভাবে রোদে পুড়ে, জলে ভিজে ফসল ফলান এ দেশের কৃষকরা, সেভাবেই তাঁদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন তিনি।
তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরে তিনগুণ কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদি। তাতে দেশের অন্নদাতারা যে আলাদা গুরুত্ব পাবে তা বুঝিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ শুরুও করেন কৃষকদের প্রকল্পে সই করে। কিষাণ নিধি প্রকল্পের ১৭তম কিস্তির অর্থ হিসাবে ২০ হাজার কোটি টাকা বিতরণে সবুজ সংকেত দেন মোদি। যা পরবর্তীকালে কৃষকদের উন্নতিতে সাহায্য করবে বলেই দাবি ছিল নমোর। এবার কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকে আরও নতুন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, উচ্চফলনশীল ক্ষমতার ১০৯ টি বীজ বাজারে আনা হয়েছে এই বৈঠকের পর। যা প্রতিকূল আবহাওয়াতেও ফসল ফলানোর ক্ষমতা রাখে। সবমিলিয়ে এদিনের বৈঠক যে কৃষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে মোদির ভাবনাকে সামনে এনেছে তা বলাই যায়। যা কৃষকদের মনেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আর সেখানেই নিজে হাতে ছাতা নিয়ে মোদি যে আচরণ দেখিয়েছেন তা নিয়ে চর্চা চলছে রীতিমতো।