অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন পাকিস্তানের আর্শাদ নাদিম। তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত গোটা পাক মুলুক। একের পর এক পুরস্কার, সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন নাদিম। তবে নজর কেড়েছে সোনাজয়ীর শ্বশুরের দেওয়া উপহার। জামাইকে আস্ত একটা মোষ দিয়েছেন তিনি। কেন এমন উপহার? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আর্শাদ নাদিম। এই মুহূর্তে পাকিস্তানী অ্যাথলিটকে গোটা বিশ্ব চেনে। বিশেষ করে ভারতে নাদিমকে নিয়ে চর্চা লেগেই আছে। কারণ, অলিম্পিকের মঞ্চে নীরজ চোপড়াকে পিছনে ফেলে সোনা জিতেছেন তিনি। আর পাকিস্তানে নাদিমকে নিয়ে চর্চা হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর হাত ধরে সে দেশের দীর্ঘদিনের পদক খরা কেটেছে।
যদিও ছোট থেকে অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি নাদিম। জ্যাভলিনের প্রতি ভালোবাসা ছিল ঠিকই, কিন্তু হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। আর্থিক অসংগতির কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। জ্যাভলিনের জগতে পেশাগত ভাবে প্রবেশ করতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে নাদিমকে। বছরের পর বছর একই জ্যাভলিনে প্রাকটিস করেছেন। পড়শিরা চাঁদা তুলে খেলার খরচ জোগাত। প্যারিস অলিম্পিকে পৌঁছে ছিলেন সকলের সাহায্য নিয়েই। এই নাদিম অলিম্পিকে সোনা জিতে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এমনকি অলিম্পিক রেকর্ডও এখন তাঁর নামেই। স্বাভাবিক ভাবেই দেশে ফিরতে নাদিমকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন সে দেশের বাসিন্দারা। সরকারের তরফে একাধিক পুরস্কার, সম্মান পেয়েছেন নাদিম। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও তাঁকে নগদ উপহার দিয়েছেন অনেকেই। তবে নাদিমের প্রাপ্তি তালিকায় সবথেকে অদ্ভুত পুরস্কারটি বোধহয় তাঁর শ্বশুর দিয়েছেন।
বছর ৬ আগে বিয়ে করেন পাকিস্তানের নাদিমের। বিয়ে হয় তাঁর গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ নওয়াজ-এর ছোট মেয়ের সঙ্গে। নাদিমের জয়ে উচ্ছ্বসিত তাঁর শ্বশুরবাড়ির সকলেই। সেই খুশিতে জামাইকে মোষ উপহার দিয়েছেন নওয়াজ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত কিছু থাকতে এমন উপহার কেন? আসলে, নাদিমের গ্রামে সম্মান জানানোর ধরণটাই এমন। কাউকে মোষ উপহার দেওয়া সেখানে সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে ধরা হয়। জামাই নাদিম যা করেছেন তাতে এমন সম্মান পাওয়া উচিত বলেই মনে করেছেন নওয়াজ। তাই নিজেই সে ব্যবস্থা করেছেন। নাদিমকে আস্ত একটা মোষ উপহার দিয়েছেন তিনি। কতটা পরিশ্রম আর স্বার্থত্যাগের মধ্যে দিয়ে নিজেকে এই জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন নাদিম, তার সাক্ষী গ্রামের বাসিন্দারা। এত সাফল্যের পরেও নিজের শিকড় না ভুলে যেভাবে গ্রামেই রয়েছেন নাদিম তা মুগ্ধ করেছে সকলকে। তাই নাদিম যে এই সম্মান পাওয়ার যোগ্য দাবিদার সে কথাও একবাক্যে মেনে নিয়েছেন সবাই। এদিকে, নাদিম নিজে থেকে কিছু পুরস্কারের দাবি জানিয়েছেন। সেসব যদিও তাঁর নিজের জন্য নয়। নাদিমের ইচ্ছা, তাঁর গ্রামের একটা রাস্তা তৈরি করা হোক। রান্নার গ্যাসের সমস্যা মেটাতেও আর্জি জানিয়েছেন পাক অ্যাথলিট। একইসঙ্গে পাশের শহরে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার আবেদনও জানিয়েছেন নাদিম। যা প্রমাণ করেছে, সোনাজয়ী অ্যাথলিটের মনটাও যেন ‘সোনা’ দিয়েই গড়া।