চলতি অলিম্পিকে রুপো জিতেছেন নীরজ চোপড়া। দেশজুড়ে এই মুহূর্তে তাঁরই চর্চা চলছে। এই আবহে সামনে আসছে এক দাবি। অনেকেই বলছেন, জ্যাভলিন আসলে বর্শা। যা ব্যবহার করতেন জেষ্ঠ্য পাণ্ডব যুধিষ্ঠির। সত্যিই কী তাই? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
একবার নয়, ক্রিকেটে ভারত বিশ্বসেরা হয়েছে বারবার। বিশ্বকাপ জয় তো বটেই, সেইসঙ্গে ক্রিকেটের বিভিন ফরম্যাটে বারবার ভারতের নাম এক নম্বরে উঠেছে। তাই দেশের মানুষও ক্রিকেট যতটা বোঝেন, জানেন অন্য খেলার প্রতি ততটা আগ্রহ দেখান না। ব্যতিক্রম জ্যাভলিন। এই কয়েক বছর আগে অবধি, যে খেলা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না অনেকেরই এখন সেই খেলা দেখতেই রাত জাগেন অনেকে।
:আরও শুনুন:
চাঁদা তুলে ট্রেনভাড়া জোগাতেন পড়শিরা, অলিম্পিকে নীরজের পাশে সেই পাক অ্যাথলিট
কারণটা অবশ্যই এক এবং একমাত্র নীরজ চোপড়া। টোকিও অলিম্পিকে সোনা জিতে চমকে দিয়েছিলেন নীরজ। এরপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন। দেশের জন্য জিতেছেন একাধিক গোল্ড মেডেল। চলতি অলিম্পিকে যদিও সোনালী স্বপ্ন সত্যি হয়নি। নীরজকে ছাপিয়ে রেকর্ড তৈরি করেছেন পাকিস্তানের আর্শাদ নাদিম। এবারের অলিম্পিকের সোনা তাঁরই। এই মুহূর্তে নেটদুনিয়ার অন্যতম আলোচনার বিষয় এটাই। সেইসঙ্গে উঠে আসছে জ্যাভলিন সম্পর্কে অদ্ভুত এক তথ্য। অনেকেই বলছেন, জ্যাভলিন আসলে বর্শা। যা একসময় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যুদ্ধ বা শিকারে এর জুড়ি মেলা ভার ছিল। জয়পুরের সংস্কৃত অধ্যাপক শাস্ত্রী কোশালেন্দ্রদাসের দাবি, এই জ্যাভলিন ছুঁড়েই শত্রুদের ঘায়েল করতেন যোদ্ধারা। জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব যুধিষ্ঠিরও এই অস্ত্র ব্যবহার করতেন বলেই উল্লেখ করেন তিনি। সরাসরি না বললেও, টুইটে নীরজের ছবি জুড়ে দেন তিনি। যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছিল, যুধিষ্ঠির ও নীরজের তুলনা। তাঁর দাবিতে সহমত পোষণ করেন অনেকেই। এই খেলার জন্ম আসলে ভারতে, সেই দাবিও উঠতে শুরু করে।
:আরও শুনুন:
নজরে সোনা, ২ কেজি ওজন ঝরান ১ ঘণ্টায়! বিনেশ-কাণ্ডের মধ্যেই জানালেন মেরি কম
কিন্তু আসল সত্যি এমনটা নয়। প্রয়োগের ক্ষেত্রে মিল থাকলেও, জ্যাভলিন আর বর্শা এক জিনিস নয়। এমনকি, এই খেলার জন্মও ভারতে নয়। ইতিহাস বলছে, জ্যাভিলনের জন্ম প্রাচীন গ্রিসে। সে দেশেই প্রথম জ্যাভলিন থ্রো-কে খেলার মান্যতা দেওয়া হয়। কিন্তু এর সঙ্গে বর্শার কী অমিল রয়েছে? এক নয়, একাধিক অমিল রয়েছে সাধারণ বর্শা আর নীরজের ব্যবহৃত জ্যাভলিনের। প্রথমেই বলতে হয় উচ্চতার কথা। বর্শা অপেক্ষা জ্যাভলিন আকারে ছোট। ওজনও অনেকটাই কম। বর্শা মূলত ভারী লোহা বা পিতল দিয়েই তৈরি করা হত। সেখানে জ্যাভলিন তৈরিতে ব্যবহার করা হয় নরম লোহা। যাতে সহজেই অনেকটা দূরে পৌঁছে যেতে পারে। জ্যাভলিন আকাশে ছুঁড়ে দিলে একেবারে সোজাসুজি নিক্ষেপিত হয় না। বাতাসে ভাসার সময়ও বোঝা যায় তা দৃঢ় নয়। এদিকে বর্শা সোজাসুজি নিক্ষেপিত হয় নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। তবে এই দুইয়ের মূল পার্থক্য ফলায়। বর্শার জন্য আলাদা ভাবে ফলা তৈরি করা হয়। শক্ত ধাতুতে তৈরি সেই ফলা এতটাই ছুঁচালো করা হয়, যে একসঙ্গে দুজনের দেহ ফুঁড়ে বেরিয়ে যেতে পারে। বা বড় কোনও শিকারকে নিমেষে কাবু করতে পারে। জ্যাভলিনে এমন ফলা থাকে না। এর মুখও ছুঁচালো হয় ঠিকই, তবে বর্শার মতো নয়। এছাড়া জ্যাভলিনের মাঝে রবারের গ্রিপ করা থাকে, যাতে সহজেই প্রতিযোগিরা ধরতে পারেন। বর্শায় এমন কিছু থাকে না। সুতরাং যুধিষ্ঠির যে বর্শা ব্যবহার করতেন, তার সঙ্গে নীরজের জ্যাভলিনের তুলনা চলে না। দুই-এর ব্যবহার আলাদা, ব্যবহারের উদ্দেশ্যও আলাদা।