এক রাতের মধ্যে ২ কেজি ওজন ঝরানো সম্ভব হয়নি। সেই কারণেই অলিম্পিক সোনার দোরগোড়ায় পৌঁছেও লড়াই থেকে ছিটকে গিয়েছেন বিনেশ ফোগত। আর এই আবহেই সোনাজয়ী প্রাক্তন বক্সার মেরি কম মনে করালেন, সোনা জেতার জন্য মাত্র এক ঘণ্টাতেই ৪ কেজি ওজন ঝরিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। শুনে নেওয়া যাক।
মাত্র একশো গ্রাম ওজনের এত ভার! অলিম্পিক সোনার দোরগোড়ায় পৌঁছেও লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়া বিনেশ ফোগতকে দেখেই সে কথা বুঝলাম আমরা। একদিনে পরের পর তিন-তিনটি লড়াইয়ে জিতে ফাইনালে পৌঁছে যাওয়া বিনেশ ফোগত। গোটা দেশের ভরসার মুখ হয়ে ওঠা বিনেশ ফোগত। গোটা দেশ যখন তাঁর হাত ধরেই প্যারিস অলিম্পিক্সে সোনার আশা দেখছে, সেই সময়ই বজ্রপাতের মতো খবর শোনা গেল- অলিম্পিক্স থেকেই বাতিল বিনেশ। সৌজন্যে একশো গ্রাম ওজন। নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বাড়তি ২ কেজি ওজন ঝরাতে রাতভর পরিশ্রম করেছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত ১০০ গ্রাম রয়েই গিয়েছে। আর তার জেরে সোনা তো দূর, অলিম্পিক্স থেকেই বাতিল বিনেশ ফোগত। এই ঘটনা নিয়ে আপাতত চর্চা চলছে দেশজুড়ে। আর তার মধ্যেই মুখ খুললেন সোনাজয়ী অলিম্পিয়ান এম সি মেরি কম। জানালেন, সোনা জেতার লড়াইয়ে নামতে ২ কেজি ওজন কমাতে হয়েছিল তাঁকেও। আর মাত্র চার ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই সে অসাধ্য সাধন করে ফেলেছিলেন বলেই জানালেন প্রাক্তন বিশ্বসেরা বক্সার।
আরও শুনুন:
পদক হারালেও, বিনেশ, আপনিই শক্তিরূপেণ সংস্থিতা…
সেটা ২০১৮ সালের সাইলেসিয়ান ওপেন বক্সিং টুর্নামেন্ট। সে বছরের তৃতীয় সোনা জেতার সুযোগ মেরি কমের সামনে। সাড়ে তিনটের সময় পোল্যান্ডে নামার পর জেট ল্যাগে ক্লান্ত মেরি দেখেন, তাঁর ওজন কয়েক কিলো বেড়ে গিয়েছে। এদিকে সকাল সাড়ে সাতটায় প্রতিযোগীদের ওজন মাপা হবে। ৪৮ কেজি বিভাগে ময়দানে নামার কথা মেরির। হাতে সময় মাত্র চার ঘণ্টা। শরীরকে বিমানযাত্রার ধকল সামলানোর সময় না দিয়েই নেমে পড়তে হয় ওজন ঝরাতে। টানা এক ঘণ্টা ধরে স্কিপিং আর স্ট্রেচ করে যান। মেরি কম বলছেন, তাতেই কমে গিয়েছিল ২ কেজি ওজন। শেষ পর্যন্ত খেলার ময়দানে নামতে পেরেছিলেন সেবার।
আরও শুনুন:
যুদ্ধের বোমায় উড়ে যায় ডান হাতই, তবুও অলিম্পিক্সে সোনা জয় এই শুটারের
মেরি কমের মতোই, সোনাজয়ী কুস্তিগির সারা হিল্ডেব্রান্টও বলছেন, তিনি নাকি ওজন কমাতে ওস্তাদ। এই সারার সঙ্গেই ফাইনালে নামার কথা ছিল বিনেশের। তবে কথা হচ্ছে, বিনেশের বাড়তি ওজন কমানো কি এতটাই সহজ ছিল? তিনিও তো ওজন কমানোর জন্য জগিং, সাইক্লিং, স্কিপিং করেছিলেন। সিরিঞ্জ দিয়ে শরীর থেকে রক্তও বার করেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। আসলে এ কথাও তো মনে রাখতে হবে যে, কুস্তিতে ৫০ কেজি বিভাগ বিনেশের ইভেন্টই নয়। তাঁর আসল ইভেন্ট ৫৩ কেজি বিভাগ। কিন্তু দিল্লির রাস্তায় আন্দোলনে শামিল হওয়া বিনেশ ৫৩ কেজির ট্রায়ালে যেতেই পারেননি। একরকম বাধ্য হয়েই তাঁকে নামতে হয়েছিল ৫০ কেজি বিভাগে। যেখানে তাঁর নিজের ওজন সাধারণত ৫৭ কেজির কাছে থাকে, সেখানে চার কেজি কমানোর বদলে ৭ কেজি ওজন কমিয়ে খেলতে হচ্ছিল বিনেশকে। শেষ পর্যন্ত পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াল ওই বাড়তি ওজনই।