বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদ। তাঁর মৃত্যুতেই আন্দোলনের আগুন জ্বলেছিল হু হু করে। তার ফলও মিলেছে। হাসিনা সরকারের পতনে উল্লাসে মেতেছেন আন্দোলনকারীরা। এই আবহে শহিদ আবু সাঈদকে উৎসর্গ করে প্রকাশিত হল নতুন বাংলা ফন্ট। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বয়স ২২। টগবগে মেধাবী যুবক। বৃদ্ধ বাবা-মার একমাত্র সম্বল। তাঁর পাঠানো টাকাতেই বাড়িতে ভাতের হাঁড়ি চড়ে। সে সব ভালোমতোই জানতেন আবু সাঈদ। তাঁর বিপদ হলে পরিবার ভেসে যাবে এ নিয়েও সন্দেহ ছিল না তাঁর মনে। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে নিজের কথা ভাবলে চলে না। আবু সাঈদও ভাবেননি। ওঁর প্রজন্মের ওপর চলা অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সকলের সঙ্গে নেমেছিলেন রাজপথে। প্রতিরোধের দাবি আদায়ের যে লড়াই, তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। কাউকে আঘাত করতে এগিয়ে যাননি। লাঠি উঁচিয়ে কাউকে সরে যেতেও বলেননি। শাসকের চোখে চোখ রেখে দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়েছিলেন। স্রেফ দাঁড়িয়েই ছিলেন। এটাই হয়তো অপরাধ! যার শাস্তি কেবল মৃত্যুদণ্ড। প্রকাশ্য দিবালোকে নিরস্ত্র যুবকের বুকে গুলি চলল। একটা, দুটো, তিনটে… মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন আবু সাঈদ। বন্ধুরা কোলে তুলে ছুটল হাসপাতালের দিকে। ততক্ষণে অবশ্য যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আবু সাঈদ আর নেই।
:আরও শুনুন:
‘নতুন’ বাংলাদেশে গুরুদায়িত্বে নোবেলজয়ী ইউনুস, অর্থনীতির সংকট মিটবে?
এ দৃশ্য প্রায় সকলেরই চেনা। সোশাল মিডিয়ার দৌলতে এই ঘটনার ভিডিও দেখেছেন অনেকেই। যারা দেখেননি তারা পড়েছেন, জেনেছেন, শিহরিত হয়েছেন। এই আবু সাঈদের মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই যেন আন্দোলনের আগুন জ্বলেছিল। সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে আরও নিষ্পাপ, নিরস্ত্র ছাত্রের মৃত্যু। রেহাই পায়নি খুদেরাও। কেউ আন্দোলন স্রেফ দেখতে এসেছিল, কেউ জল বিলি করতে, গুলি বিঁধেছে এদের সবার বুকেই। ছাত্রদের রক্তে রাঙানো ‘অগাস্ট বিপ্লব’ নতুন করে স্বাধীনতা এনেছে বাংলাদেশে। হাসিনা সরকারের পতন বুঝিয়ে দিয়েছে, কীভাবে আন্দোলন করতে হয়। গোটা বিশ্বকে সেই মানে বুঝিয়েছেন বাংলাদেশের ছাত্ররা। এই আবহে, সকলের মনে রয়ে গিয়েছেন আবু সাঈদ। একদিকে যেখানে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে, অন্যদিকে সেখানেই আবু সাঈদের ছবি বুকে নিয়ে ঘুরছেন ছাত্ররা।
:আরও শুনুন:
ভাঙল মূর্তি, বঙ্গবন্ধুর হিন্দু-মুসলিমকে রক্ষার কর্তব্য মনে রাখবে তো ‘নতুন’ বাংলাদেশ?
এই বীর শহিদকে সম্মান জানাতেই প্রকাশিত হয়েছে নতুন বাংলা ফন্ট। এমনিতেই বাংলা ফন্টের জগতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশে। মোটামুটি গোটা বিশ্বেই এ দেশের তৈরি করা ফন্ট ব্যবহারের চল রয়েছে। সেই তালিকায় এবার যোগ হলেন, “শহীদ আবু সাঈদ”। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই ফন্ট ব্যবহারের সুযোগ মিলবে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় লিপিঘরের তরফে এই ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, মোঃ আলিনুর ইসলাম শহিদকে উৎসর্গ করেছেন এই ফন্ট। আগামী প্রজন্ম যেন কোনওভাবেই আবু সাঈদের আত্মত্যাগ না ভোলে সেই ব্যবস্থাই করবে এই বাংলা হরফ। যদিও, সে দেশের মানুষ জানে ‘শহিদের রক্ত হবে না ব্যর্থ’ কথাটির মানে। নাহলে হয়তো এই আন্দোলন কখনও পরিণতি পেত না।