ভারত বনাম পাকিস্তান। খবরের কাগজে প্রায়শই এই শিরোনাম দেখা যায়। ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা সিনেমা, ভারত-পাক দ্বৈরথ চিরন্তন। কিন্তু ভারতীয় খেলোয়াড়দের পাকিস্তানের হয়ে ব্যাট ধরতে শুনেছেন কখনও? ইতিহাস সাক্ষী আছে এমন ঘটনারও। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
প্রতিবেশী দেশ। তবু বরাবরই দুই-য়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার আবহ। খেলা হোক বা সিনেমা, সবক্ষেত্রেই ভারতকে টেক্কা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা দেখা যায় পাকিস্তানের মধ্যে। কখনও প্রকাশ্যে, আবার কখনও গোপনে। ভারতের তরফে যোগ্য জবাবও মেলে। এই পাকিস্তানের হয়েই নাকি খেলতে নেমেছিলেন ভারতীয় ব্যাটাররা।
ক্রিকেটে সদ্য বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এ ক্রিকেটের প্রতিটি ফরম্যাটেই পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে ভারত। তাও ভারত-পাক ম্যাচের সময় সমর্থকদের মনে অন্যরকম উত্তেজনা কাজ করে। কোনওভাবেই প্রতিপক্ষকে দুর্বল মানার সুযোগ দেন না দুই দলের খেলোয়াড়রাই। অথচ দেশভাগের আগে এই দ্বৈরথ, এই রেষারেষির কোনও অস্তিত্বই ছিল না। একই দলের হয়ে মাঠে নামতেন সি কে নাইডু, লালা অমরনাথ-এর মতো খেলোয়াড়রা। কখনও শক্তিশালি ব্রিটিসদেরও জোড় টক্কর দিতেন ভারতীয় ব্যাটাররা। দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে ভাগ হয়ে যায় ভারতের এই দলটিও। কয়েকজন খেলোয়াড়ের ঠিকানা হয় পাক দলে। তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ভারতের হয়েও মাঠ কাঁপিয়েছেন। ইতিহাসে এমন নজির হাতে গোনা। একই খেলোয়াড় দুটি আলাদা দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলছেন, এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে। অথচ ভারত-পাকিস্তানের মতো দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশই এমন ঘটনার সাক্ষী।
‘৪৭ সালের দেশভাগ রাতারাতি ভাঙন ধরিয়েছিল একাধিক পরিবারে। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে অনেকেই ভেঙে যাওয়া দেশের কোনও এক প্রান্তে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেই দলেই ছিলেন তৎকালীন ভারতীয় দলের তিন ক্রিকেটার। তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন আমির ইলাহি। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই ৫০০-র বেশি উইকেট নিয়ে নজর কেড়েছিলেন এই বোলার। ভারতের হয়ে ছ বার টেস্ট খেলেছেন আমির। কিন্তু দেশভাগের পর তাঁর ঠিকানা হয় পাকিস্তানে। সে দেশের হয়ে আরও অনেক ম্যাচ খেলেন আমির। এরপর বলতে হয় আবদুল হাজিজ কার্দার-এর কথা। তাঁকে অনেকেই ‘পাকিস্তানি ক্রিকেটের জনক’ বলে থাকেন। বাঁহাতি ব্যাটার দেশভাগের সময় ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে তাঁর হাত ধরেই শুরু হয় ক্রিকেট। টানা ২৩টি ম্যাচ খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে। ১৯৫২ সালে সে দেশের ক্যাপ্টেনও হন। আর প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেই নামতে হয়েছিল তাঁকে। একইভাবে গুল মহম্মদও ভারতের হয়ে একাধিক ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু দেশভাগের পর তিনি পাকিস্তানের অংশ হন। খুব বেশি ম্যাচ না খেললেও পাক ক্রিকেটের উন্নতিতে তাঁর ভূমিকা ছিল যথেষ্টই। পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য ছিলেন দীর্ঘদিন। ভারতের হয়ে ক্রিকেট জীবন শুরু করলেও তৎকালীন পাক ক্রিকেটে এঁরাই ছিলেন মহীরুহ।