সন্তানের মতোই ভালোবাসেন। তাই আরাধ্য গোপালকে স্কুলে ভর্তি করেছেন মহিলা। গোপালের জন্য প্রতিমাসে স্কুলে মাইনে দিচ্ছেন। দেখাশোনার জন্য এক সেবকও রেখেছেন। কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শ্রীকৃষ্ণের বাল্যরূপ। অনেক বাড়িতেই গোপাল পুজোর চল রয়েছে। তবে অন্যান্য দেবতার মতো গোপাল বিগ্রহের স্থান স্রেফ সিংহাসনে নয়। আরাধ্যকে একেবারে নিজের সন্তানের মতোই আগলে রাখেন ভক্তরা। গোপালকে নিয়মিত স্নান করানো, জামা পরানো, ভোগ নিবেদন তো রয়েছেই। সেইসঙ্গে কোথাও ঘুরতে গেলেও গোপালকে সঙ্গী করেন অনেকে। অবশ্য এঁদের সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন এই মহিলা। গোপালকে স্কুলে ভর্তি করে চমকে দিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: অভয়মুদ্রা থেকে চক্রব্যূহ, হিন্দু ‘অস্ত্রেই’ গেরুয়া শিবিরকে পালটা দিচ্ছেন রাহুল
ঘটনাটি যোগীরাজ্যের। রাজধানী লখনউ এর বাসিন্দা গুড়িয়া নিঃসন্তান। তাই গোপালকেই নিজের সন্তানের জায়গা দিয়েছেন তিনি। নিয়মিত গোপালের পরিচর্যা করাই তাঁর একমাত্র কাজ। সম্প্রতি নিজের গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিলেন গুড়িয়া। সঙ্গে ছিল গোপালের মূর্তি। গ্রামের বাসিন্দারা মূর্তি দেখে জানতে চান, কেন এইভাবে কোলে করে গোপাল নিয়ে ঘুরছেন গুড়িয়া? উত্তরে গুড়িয়ে বলেন, এই গোপাল তাঁর সন্তান। সদ্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। তাই নিজের গ্রামের বাড়ি দেখাতে নিয়ে এসেছেন ‘ছেলেকে’। গ্রামের লোকজন একথা শুনে রীতিমতো অবাক হন। পিতলের মূর্তি কীভাবে স্কুলে ভর্তি হয়, সেই নিয়েই ভাবতে বসেন সকলে। কেউ কেউ ধরেই নেন গুড়িয়া মিথ্যে বলছেন। কিন্তু না। বাস্তবেই ওই মূর্তিটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন গুড়িয়া।
:আরও শুনুন:
তাজমহলে শিবমূর্তি! শ্রাবণমাসে গঙ্গাজল নিয়ে হাজির মহিলা, কী হল তারপর?
জানা গিয়েছে, লখনউ-এর এক বেসরকারি স্কুলে গোপালকে ভর্তি করেছেন তিনি। নাম হিসেবে লেখা হয়েছে লাড্ডু গোপাল। বয়স দু’বছর। এই বয়সী শিশুকে নার্সারিতে ভর্তি করাই যায়। লাড্ডু গোপালকেও তেমনটাই করেছেন গুড়িয়া। শুধু তাই নয়, লাড্ডু গোপালের দেখাশোনা করার জন্য সেবকের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। গোপালকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, আবার স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে আসার দায়িত্ব ওই সেবকের। প্রতি মাসে গোপালের জন্য স্কুলে ২ হাজার টাকা মাইনেও দেন গুড়িয়া। সেইসঙ্গে ব্যাগ, জলের বোতল, বই খাতাও কিনে দিয়েছেন সাধের গোপালকে। মহিলার দাবি, গোপালের মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব টের পান তিনি। স্কুল থেকে ফিরেই নাকি গোপালের মুখভার হয়ে যায়। আবার স্কুলে যাওয়ার সময় আনন্দে হাসি ফুটে ওঠে গোপালের মনে। এমনটা অবশ্য অস্বাভাবিক নয়! আরাধ্যকে এইভাবে সন্তান বা মাতৃরূপে কল্পনা করেছিলেন বহু সাধক। তারাপীঠ ভৈরব বামাক্ষ্যাপা মা তারাকে নিজে হাতে খাইয়ে দিতেন, দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর সঙ্গেও খানিক একইরকম আচরণ করতেন শ্রীরামকৃষ্ণ। আবার নিমাই-এর কৃষ্ণ প্রেমেও এই ভক্তির ছাপ স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু এঁদের কেউই আরাধ্যকে স্কুলে ভর্তির কথা ভাবেননি। এই মহিলা ভক্তির টানে এমনটা করেছেন। এতে শুধুমাত্র তাঁর গ্রামের মানুষ নয়, অবাক হয়েছেন নেটদুনিয়ার বাসিন্দারাও। গোপালের জন্যও যে এমনটা করা যায়, তা স্বপ্নেও ভাবননি বলে দাবি নেটদুনিয়ার একাংশের।