ভয়াবহ ভূমিধসে কেরলের ওয়ানড়ে মৃত্যুমিছিল। আর সেখানেই সেতু গড়ে দুর্গতদের উদ্ধার করছেন এক মহিলা। পেশায় যিনি সেনাবাহিনীর মেজর। সমাজ জুড়ে জারি থাকা লিঙ্গবৈষম্যকে উড়িয়ে দিয়েই কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছেন এই মহিলা। শুনে নেওয়া যাক।
প্রকৃতির রুদ্ররোষে বিপর্যস্ত ঈশ্বরের নিজের রাজ্য কেরল। ভয়াবহ ভূমিধস আর লাগাতার বৃষ্টি, দুয়ে মিলে কেড়ে নিল তিনশোর বেশি প্রাণ। মানচিত্র থেকে প্রায় মুছে গিয়েছে একাধিক জনপদ। কিন্তু একদিকে যখন এমন দুর্যোগ আর মৃত্যুর ঢল, তখনই অন্যদিকে হাতে হাত ধরে দুর্গতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন অনেক মানুষ। সেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনা, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা জীবন বাজি রেখে সে যুদ্ধে ঝাঁপিয়েছেন। আর তাঁদের সঙ্গেই সমান দাপটে কাঁধে কাধ মিলিয়ে লড়তে দেখা গিয়েছে এক নারীকে।
:আরও শুনুন:
বড্ড বেশি মানুষ গেল বানের জলে ভেসে! প্রকৃতির পূর্বাভাসকে গুরুত্ব দিতে শেখাবে ওয়ানড়?
অবাক হচ্ছেন? সত্যিই, এহেন কাজে মেয়েদের দেখা পাওয়ার আশা তো কেউ করে না। এমনকি মেয়েরা সে কাজের শরিক হতে চাইলেও, বাধা আসে। মনে করে দেখুন, সাম্প্রতিক কালের গুঞ্জন সাক্সেনা ছবিটির কথা। ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম মহিলা অফিসারকে নিয়ে তৈরি সে ছবি দেখিয়েছিল, কীভাবে প্রশিক্ষণে বা যুদ্ধে যাওয়ার সময় পুরুষ সহকর্মীদেরই বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। কেবল মেয়ে বলেই। সেখানে এহেন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে উদ্ধারকাজে হাত লাগাচ্ছেন কোনও মহিলা? হ্যাঁ। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। জানা যাচ্ছে, সীতা শেলকে নামের ওই মহিলা আসলে সেনাবাহিনীর মেজর। ভূমিধসে তছনছ হয়ে যাওয়া চুরালমালা ও মুন্ডাক্কাইয়ের মধ্যে বেইলি ব্রিজ গড়ে তুলেছে যে ইঞ্জিনিয়ারিং দল, সে দলের একমাত্র মহিলা সদস্য।
একদিকে ধসের কারণে খাদ, আলগা মাটি পাথরের স্তূপ, মৃতদেহের টুকরো। অন্যদিকে লাগাতার বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়া। এমন অবস্থা যে হেলিকপ্টারের পক্ষেও নামা সহজ হচ্ছে না। তার মধ্যেই অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯০ ফুট দীর্ঘ সেতুটি বানিয়ে ফেলেছেন সীতারা। যাতে ত্রাণ নিয়ে যেতে পারে গাড়িগুলি। যাতে দুর্গত মানুষদের স্থানান্তরিত করা যায়। বিধ্বস্ত ওয়ানড়ে যেভাবে দাপটের সঙ্গে কাজ করছিলেন সীতা, সেই ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে নেটদুনিয়ায়। জানা গিয়েছে, মহারাষ্ট্রের এক অজ গ্রাম থেকে উঠে আসা সীতা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। ২০১২ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। এই প্রথমবার নয়, এর আগেও বেইলি ব্রিজের মতো দ্রুত উদ্ধারকারী সেতু তৈরির কাজে বহুবার হাত লাগিয়েছেন সীতা।
:আরও শুনুন:
গর্ভে ৭ মাসের সন্তান, তবু অলিম্পিকে লড়ে কুর্নিশ আদায় হবু মায়ের
সমাজে নানারকম কাজের উপর তকমা লাগানো থাকে, ওটা মেয়েদের দ্বারা হবে না। কোনও মহিলাকে কাজে নিয়োগের সময়ও এই পূর্বনির্ধারিত ধারণা কাজ করে চলে অনেক ক্ষেত্রেই। যিনি কাজ করবেন, তিনি নিজে কী পারবেন আর কী পারবেন না, তা দেখানোর সুযোগই তাঁকে দেওয়া হয় না অনেক সময়ে। কিন্তু, গোটা সমাজের এইসব বাঁধা ছক ভেঙে দিয়ে যান এক-একজন। সপাটে বুঝিয়ে দেন, কোনও মানুষকেই কোনও গণ্ডিতে বাঁধতে চাওয়া আসলে একটা বদভ্যাস। যেমন সে কথা বুঝিয়ে দিলেন মেজর সীতা শেলকে।