মোদি সরকারের আমলে তিন তালাক রদের মতো নানা ইস্যুতে বারবারই উঠে এসেছে মুসলিম মেয়েদের পরিস্থিতির কথা। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন পিতৃতান্ত্রিক বিধিনিয়মের জেরে মেয়েদের পিছিয়ে থাকার। সেই প্রেক্ষিতেই এবার ওয়াইসির তোপ, মুসলিম পুরুষ নয়, আসলে সরকারই পিছিয়ে দিচ্ছে মুসলিম মেয়েদের। কেন এ কথা বললেন সাংসদ? শুনে নেওয়া যাক।
কখনও তিন তালাক রদ, কখনও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর চেষ্টা- বারেবারেই মুসলিম মেয়েদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছে মোদি সরকার। মুসলিম সম্প্রদায়ে মহিলাদের যেভাবে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, বিজেপি সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে চায় বলেই সরব হয়েছেন নেতারা। কিন্তু এবার সেই দাবির পালটা দিয়েই এআইএমআইএম সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির বিস্ফোরক দাবি, মুসলিম মহিলাদের পিছিয়ে থাকার জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের পুরুষদের আদৌ দায়ী করা চলে না। বরং সরকারই আসলে পিছিয়ে দিচ্ছে মুসলিম মেয়েদের। শিক্ষায় বরাদ্দের খতিয়ান তুলেই কেন্দ্র সরকারকে কড়া খোঁচা মুসলিম নেতার।
আরও শুনুন:
‘সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় শত্রু বলিউড!’ কেন বলছেন IAS নিয়াজ খান?
হায়দরাবাদের সাংসদের দাবি, মুসলিম পুরুষেরা মহিলাদের অবদমন করতে চায়, এই ছকবাঁধা ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। মুসলিম সমাজে মেয়েদের পড়তে বাধা দেওয়া হয়, উচ্চশিক্ষায় বাধা দেওয়া হয়- এ কথাও ঠিক নয়। তথ্য পরিসংখ্যান তুলেই ওয়াইসি বলছেন, স্কুলে ভরতির নিরিখে দেখা যাবে, মুসলিম ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি। লিঙ্গের নিরিখে এই অনুপাত অন্য সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে ০.৯৩, কিন্তু মুসলিমদের ক্ষেত্রে ০.৯৯। অথচ উঁচু ক্লাস থেকেই বাড়তে থাকে স্কুলছুটের সংখ্যা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির মধ্যে ১৪ শতাংশের মতো, একাদশ-দ্বাদশে প্রায় ১১ শতাংশের মতো। সমস্যাটা কোথায়? ওয়াইসি বলছেন, সমস্যা হল দারিদ্র্যে, এবং যথাযথ সরকারি সুবিধা না থাকায়। তিনি দেখান, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া কিংবা আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় ছাত্রপিছু ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ। যেখানে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্রপিছু সোয়া ৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এহেন আচরণকে পক্ষপাত বলেই দাগিয়ে দিয়েছেন ওয়াইসি। এর আগেও হিজাব বিতর্কের সময় সংশয় দানা বেঁধেছিল, হিজাব সরানোর নিয়ম মুসলিম মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পথেই কাঁটা দেবে কি না। এবারও মুসলিম মেয়েদের পিছিয়ে পড়ার জন্য সরকারকেই দায়ী করলেন ওয়াইসি। একইসঙ্গে পাঠ্য বই থেকে বাবরি ধ্বংস এবং গুজরাট হিংসা বাদ দেওয়ার নির্দেশকেও সরকারের পক্ষপাত বলেই আক্রমণ শানালেন তিনি।
আরও শুনুন:
তিন তালাকের কফিনে খোরপোশ পেরেক, অধিকার আরও পোক্ত মুসলিম মহিলাদের?
এমনিতে খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদি থেকে হেভিওয়েট নেতানেত্রীরা, সময়ে সময়ে ধর্মীয় বিভাজনের সুর শোনা যায় সকলের গলাতেই। কিন্তু ভোটের অনেক আগে থেকেই মুসলিম মহিলাদের কাছে টানতে তৎপর হয়েছিল গেরুয়া শিবির। মুসলিম মহিলাদের সুবিধার কথা ভেবে কেন্দ্র সরকারের নানা পদক্ষেপ, আর বিজেপি নেতৃত্বের কথায় তা স্পষ্টও হচ্ছিল। মোদি সরকারের আমলেই রদ হয়েছে তিন তালাক আইন। আবার লিঙ্গবৈষম্য ঘুচিয়ে মুসলিম মহিলাদের সমানাধিকারের জন্যই ইউনিফর্ম সিভিল কোড জরুরি, সে কথাও বারেবারে বোঝাতে চেয়েছেন মোদি। তিন তালাক রদের পরে লিঙ্গবৈষম্য দূর করা এবং নারীদের সমান অধিকারের পক্ষে রীতিমতো প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। কিন্তু তা কতখানি মুসলিম মহিলাদের কথা ভেবে, সে নিয়ে আগেও সংশয় শোনা গিয়েছে মুসলিম নেতাদের গলায়। এবারও সেই সুরেই সরব হলেন এআইএমআইএম সুপ্রিমো।