দুই নয়, অলিম্পিকের মঞ্চে আসলে দাঁড়িয়ে ছিলাম তিনজন। ৭ মাসের সন্তানকে গর্ভে নিয়েই অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে বলছেন হবু মা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তাঁর কথা।
মাকে সঙ্গে নিয়ে বীরপুরুষের দূরে যাওয়ার গল্প? উঁহু। বরং সন্তানকে নিজের ভেতর ধারণ করেই তলোয়ার হাতে তুলেছেন মা। এসে দাঁড়িয়েছেন বিশ্বের মঞ্চে, যে মঞ্চকে গোটা দুনিয়া নাম দিয়েছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। অলিম্পিক্স। চলতি অলিম্পিক্সেই লড়াইয়ের জোরে নজর কেড়েছেন, বা বলা ভালো নজির গড়েছেন নাডা হাফেজ নামের এই তরুণী। সাত মাসের সন্তানকে গর্ভে নিয়েও যিনি লড়াই ছাড়েননি।
:আরও শুনুন:
কথা দিয়েছিলেন ছাত্রী, মনুর জয়ে প্রতিশ্রুতি পূরণের স্বাদ পেলেন প্রাক্তন শিক্ষিকা
মেয়েদের সঙ্গে মাতৃত্বকে এক অদ্ভুত সমীকরণে জুড়ে দেওয়া হয়। এমন এক সমীকরণ, যেন মাতৃত্ব না আসা পর্যন্ত মেয়েদের সাফল্যের মাত্রাটি পূর্ণ হচ্ছে না। অথচ এ কথাও ঠিক যে, মাতৃত্ব মানেই মেয়ের যাবতীয় চলনেবলনে টানা হতে থাকে কোনও কোনও গণ্ডি। মা হওয়া মানেই এমনটা করা যাবে না, অমনটা বলা যাবে না- এমন হাজারও বিধিনিষেধ। এমনিতেই শারীরিক অসুবিধা কিংবা সন্তানকে দেখাশোনার মতো আবেগ তো থাকেই, তার পাশাপাশি এহেন নিয়ম নির্দেশিকা। অথচ সব মিলিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে সেই মেয়ের কার্যকারিতা নিয়েই। মাতৃত্বকালীন ছুটির কারণে কর্মক্ষেত্রের টানাপোড়েনের কথা তো সব দেশেই কমবেশি সত্য। কিন্তু সেই সমস্ত সংশয় আর সন্দেহকে তলোয়ারের ঘায়েই উড়িয়ে দিয়েছেন এই তরুণী। বাস্তবিকই, তলোয়ার তাঁর অস্ত্র। ফেন্সিং ইভেন্টটিতে অংশ নিয়েই প্যারিস অলিম্পিক্সে নেমেছেন মিশরের এই ক্রীড়াবিদ। সাত মাসের গর্ভাবস্থাও বাধা দিতে পারেনি তাঁকে। নিজের র্যাংকিং ৪১, অথচ প্রথম ম্যাচেই হারিয়ে দেন সাত নম্বর থাকা যুক্তরাষ্ট্রের এলিজাবেথ তারতাকোভস্কিকে। প্রথম ম্যাচ জয়ের পর শেষ ষোলোতে উঠে হবু মা গোটা দুনিয়াকে সোচ্চারে জানিয়েছিলেন, পোডিয়ামে আসলে দুজন খেলোয়াড় ছিল না। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা তিনজন। আমি, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী, আর এক ছোট্ট অলিম্পিয়ান। আমার গর্ভের শিশু।
:আরও শুনুন:
অলিম্পিকের রুপো থেকে হলিউডের রুপোলি দুনিয়ায় পা, চেনেন এই ভারতীয়কে?
২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক, ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকের পর এবার তৃতীয়বার অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন বছর ছাব্বিশের তরুণী। অলিম্পিককে পাখির চোখ করেই দিনের পর দিন প্র্যাকটিসে ঘাম ঝরান অ্যাথলিটরা। সন্তানসম্ভাবনার আনন্দ তাঁর সেই অন্য আনন্দের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, এমনটা চাননি নাডা। তাই দুটি ঘটনাকেই তিনি মিলিয়ে নিয়েছেন একসঙ্গে। যদিও এবারের অলিম্পিক সফর দীর্ঘ হয়নি নাডার জন্য। ইতিমধ্যেই পদক জয়ের আশা থেমে গিয়েছে তাঁর। তবুও, সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এই লড়াই তাঁকে যে শিরোপা দিয়েছে, তা কেড়ে নেয় কার সাধ্য!