অলিম্পিকের নানা ইভেন্টের আসরে তো চোখ থাকেই গোটা বিশ্বের। তবে চোখের আড়ালে যে অন্য খেলাও চলে, তার প্রমাণ দেয় প্রতিটি অলিম্পিকে বিপুল সংখ্যায় কন্ডোম বিতরণ। শুনে নেওয়া যাক।
অলিম্পিক গেমসে সেরা হলে মিলবে পদক। কিন্তু যাঁরা পুরস্কার পেলেন না, তাঁদের কি হাতে কেবল পেনসিল? উঁহু, সব প্রতিযোগীকেই একটি গিফট কিট হাতে তুলে দেন অলিম্পিক্স কর্তৃপক্ষ। সেখানে তোয়ালে, জলের বোতল, এমন নানারকম ছোটখাটো জিনিসের সঙ্গে একটি জিনিসের থাকা আবশ্যিক। তা হল কন্ডোম। চলতি প্যারিস অলিম্পিকে যেমন বিলি করা হয়েছে ৩ লক্ষ কন্ডোম, শোনা যাচ্ছে এমনটাই। তার মোড়কে আবার খেলোয়াড়দের প্রতি ‘ফেয়ার প্লে’-র উপদেশ। যৌনতায় বাধা না থাকলেও, সঙ্গী বা সঙ্গিনীর মতামত জেনে তবেই যে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া উচিত, সে কথাটিই মনে করিয়ে দিচ্ছে এই মন্তব্য।
:আরও শুনুন:
অলিম্পিকের আসরে নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ! নিয়ম ভাঙার শাস্তি ছিল মৃত্যু
আসলে অলিম্পিকের সঙ্গে যৌনতার গোপন গোপন খেলা চলে আসছে বহুদিন ধরেই। অ্যাথলিটদের মুখে মুখে গল্পগুজবেই সে কথা ছড়িয়ে পড়েছে বারবার। এমনিতে জিমনাশিয়াম কথাটিই এসেছে প্রাচীন গ্রিসের যে ‘জিমনোস’ শব্দ থেকে, তার অর্থ নগ্ন। প্রাচীন অলিম্পিকে প্রতিযোগীদের গায়ে সুতোটুকুও থাকত না। নগ্নতা ও যৌনতা সমার্থক না হলেও, তাদের সম্পর্ক নিবিড়। এখনকার অলিম্পিকও সেই সম্পর্ক ধরে রেখেছে সযত্নে। শারীরিক সক্ষমতার তুঙ্গে থাকা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অ্যাথলিটরা যেখানে জড়ো হচ্ছেন, সেখানে শরীরের খেলাও যে জড়িয়ে যায়- সে কাহিনি অলিম্পিকের আড়ালে আবডালে ঘোরে। পাঁচবারের সোনাজয়ী মার্কিন সাঁতারু রায়ান লোচে যেমন জানিয়েছেন, প্রায় ৭০-৭৫% অ্যাথলিটই নাকি এখানে এসে যৌনতায় লিপ্ত হন। দুবারের সোনাজয়ী মার্কিনি ফুটবলার হোপ সোলো জানিয়েছেন, প্রকাশ্যে, কখনও মাঠের ওপর, কখনও দুটি বাড়ির মাঝখানে খেলোয়াড়দের যৌনক্রীড়ায় মেতে উঠতে দেখেছেন তিনি। পরিসংখ্যান জানায়, সঙ্গী খোঁজার জন্য নানারকম অ্যাপ ব্যবহার করার চলও ইদানীং কালে দিব্যি চালু গেমস ভিলেজে। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকের সময় একটি বিশেষ অ্যাপ ব্যবহারে শীর্ষে ছিল লন্ডনই। আবার ২০১৩-র সোচি উইন্টার অলিম্পিকেও এমন আরেকটি অ্যাপের রমরমা ছিল বলে শোনা যায়।
:আরও শুনুন:
হিটলারের সামনে মাথা ঝোঁকাননি, অলিম্পিকে সেরা হয়েই জবাব দিয়েছিলেন যাঁরা
তবে এইচআইভি-র চোখরাঙানিতে, বাধ্যত ১৯৯২ সালের বার্সেলোনা অলিম্পিক থেকে কমিটিই নিজ উদ্যোগে কন্ডোম বিতরণ করতে থাকে। ২০০০-এর সিডনিতে প্রাথমিক অর্ডার ছিল ৭০ হাজার কন্ডোমের। তাতে না কুলোনোয় মাঝপথে আরও বিশ হাজারের অর্ডার দেওয়া হয়। এর পর থেকেই নাকি অলিম্পিক-প্রতি এক লক্ষ কন্ডোমের আগাম অর্ডার ধার্য করা হয়েছে। যদিও খবর বলছে, ২০১২-র লন্ডন অলিম্পিকেই সব রেকর্ড ভেঙে সে সংখ্যা দেড় লক্ষ ছুঁয়ে ফেলে। আর ঠিক বারো বছর পর সে সংখ্যাটা হয়ে গিয়েছে দ্বিগুণ। এর মাঝে, রিও অলিম্পিকে প্রয়োজন পড়েছিল মোট সাড়ে চার লক্ষ কন্ডোমের। অ্যাথলিটদের সংখ্যার অনুপাতে মাথা পিছু ৪২টি! হ্যাঁ, করোনার চোখরাঙানিতে টোকিও অলিম্পিকে ঘনিষ্ঠতার সামনে নিষেধাজ্ঞা ঝোলাতে হয়েছিল বটে। এবার অ্যান্টি-সেক্স বেডের কথা শোনা গেলেও, কন্ডোমের সংখ্যা তো উলটো কথাই বলছে। আসলে যৌনতা নিয়ে কানাঘুষো চললেও, ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে নারাজ অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ। কে, কার সঙ্গে যৌনতায় স্বচ্ছন্দ হবেন, সে তো একেবারেই ব্যক্তিগত নির্বাচন। তবে একজনের ব্যক্তিগত চাওয়া যেন অন্য কারও অস্বাচ্ছন্দ্যের কারণ না হয়ে ওঠে, বা অন্যকে কোনোভাবে বিপদে না ফেলে, সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।