নিজে অনাথ। অনাথ আশ্রমেই বেড়ে উঠেছেন এই মহিলা। তাই বড় হয়ে নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন অনেকের। তবে তাঁরা শিশু নন, বৃদ্ধ বৃদ্ধা। অন্তত ৩৫০০ জন বয়স্ক মানুষের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন মহারাষ্ট্রের এই মহিলা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মা কিংবা বাবা-রা ঠিক কেমন হন, তা জানার সুযোগই হয়নি তাঁর। অনাথ আশ্রমেই বেড়ে উঠেছেন এই মহিলা। তাই বড় হয়ে নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন অনেক মা-বাবার। তিনিই হয়ে উঠেছেন তাঁদের মেয়ে। হ্যাঁ, শিশুদের নয়, বয়স্কদেরই দত্তক নেন যোজনা ঘরাট। আপাতত তাঁর দত্তক নেওয়া বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ৩৫০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।
:আরও শুনুন:
গ্রামে নেই কোনও মুসলিম, গুজরাটের এই দরগা দেখভাল করেন হিন্দু ব্রাহ্মণরাই
এ দেশের পথেঘাটে এমন অনেক শিশুরই দেখা মেলে, যারা অনাথ। মা-বাবার স্নেহবঞ্চিত সেইসব শিশুর ঠাঁই হয় অনাথ আশ্রমে। কারও কারও ভাগ্যে নতুন কোনও পরিবারে আশ্রয় জোটে, কারও শৈশব পেরিয়ে যায় অনাথ পরিচয়কে সঙ্গী করেই। তবে এ কথাও সত্যি যে, কেবল শিশুরাই কিন্তু একলা হয় না। এমন অনেক বয়স্ক মানুষও রয়েছেন, যাদের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ নেই। কিংবা পরিবারের কেউ থাকলেও সে দায়িত্ব অস্বীকার করেছে। এইসব বয়স্ক মানুষেরা কেউ অসুস্থ, কেউ হয়তো মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। তা ছাড়া বয়সের ভারে তাঁদের আর রুজিরোজগারের ক্ষমতাও নেই। সত্যি বলতে, পথেঘাটে যত বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধাকে দুটি ভিক্ষা পাওয়ার আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, তাতে এই তথ্যের সত্যতা নিয়ে সংশয়ের কোনও জায়গাই নেই। কথা হল, এই মানুষদের তো সেভাবে আশ্রয়ের উপায়ও নেই। অনাথ শিশুর দুর্ভাগ্যও কম নয়, তবে তার জন্য কিছু অনাথ আশ্রম বা সরকারি হোম রয়েছে। কোনও কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তাদের দত্তক নেবেন, এটুকু আশা রয়েছে। কিন্তু সহায়-সম্বলহীন বয়স্কদের তো বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার সঙ্গতিও নেই। তাঁদের কথাই ভেবেছেন যোজনা। নিজের অভিজ্ঞতায় তিনি জেনেছেন আশ্রয় না থাকার যন্ত্রণা। রেলওয়ে স্টেশন, ওভারব্রিজ, মন্দির বা হাসপাতালের বাইরে, এমন নানা জায়গা থেকে তিনি খুঁজে নিয়েছেন নিরাশ্রয় মানুষদের। তফাত একটাই, তাঁদের বয়স তাঁর চেয়ে অনেকটাই বেশি।
:আরও শুনুন:
মোটা টাকা মাইনে, তাও সপ্তাহান্তে অটো চালান আইটি কর্মী, কেন জানেন?
নিজের হাতেই একটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলেছেন যোজনা ঘরাট। মহারাষ্ট্রের থানে-তে তাঁর স্মিট ওল্ড এজ হোম অ্যান্ড কেয়ার ফাউন্ডেশনের তরফে আশ্রয় ও শুশ্রূষা পান ওই অসহায় বৃদ্ধ বৃদ্ধারা। তবে কেবল পেটের খাবার ও মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুই নয়, তাঁরা আরও বেশি করে যা পান, তা হল ভালোবাসা। মেয়ের মতোই তাঁদের জীবনের শেষ বছরগুলো ভালোবাসায়, আদরে ভরিয়ে দেওয়ার ব্রত নিয়েছেন যোজনা। যে মা-বাবার দেখা মেলেনি তাঁর, এইভাবেই তাঁদের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন এই মহিলা।