টোকিও অলিম্পিকের আসর বসেছিল দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। তার আগে দর্শকশূন্য না হলেও, নারীদের অলিম্পিক দেখার ক্ষেত্রে বাধা ছিল দীর্ঘদিনের। কী কারণে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। এই নামেই ডাকা হয়, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া-আসর অলিম্পিককে। করোনার ঢেউ সামলে চলতি বছরে অলিম্পিকের জন্য সেজেছে প্যারিস। এর আগের টোকিও অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছিল বটে, তবে সেখানে দর্শকদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে বিদেশি দর্শকদের অলিম্পিক দেখতে আসার ছাড়পত্রই মেলেনি। তবে ইতিহাস বলছে, দর্শকদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কিন্তু সেবারই প্রথম নয়। বরং অলিম্পিকের গোড়ার যুগে দীর্ঘদিন ধরেই জারি ছিল এহেন নিষেধাজ্ঞা, তবে তা কেবলমাত্র নারীদের জন্যই জারি করা হয়েছিল। বহুদিন ধরেই এমন নিয়ম ছিল যে কোনও নারী অলিম্পিকের আসরে কোনও খেলা দেখতে আসতে পারবেন না।
:আরও শুনুন:
অলিম্পিকের রুপো থেকে হলিউডের রুপোলি দুনিয়ায় পা, চেনেন এই ভারতীয়কে?
কিন্তু কেন? এত বড় মাপের একটি প্রতিযোগিতার আসর, যা নিয়ে সেকালে সারা গ্রিস গর্ব করত, তা থেকে নারীদের দূরে সরিয়ে রাখার কারণ ঠিক কী?
আসলে এর মূলে রয়েছে নগ্নতা। জিমন্যাসিয়াম কথাটিই এসেছে প্রাচীন গ্রিসের যে ‘জিমনোস’ শব্দ থেকে, তার অর্থ: নগ্ন। প্রাচীন অলিম্পিকে সচরাচর প্রতিযোগীদের গায়ে সুতোটুকুও থাকত না। সম্পূর্ণ নগ্ন শরীরেই ট্র্যাকে দৌড়োতেন তাঁরা। কিংবা অংশ নিতেন অন্যান্য প্রতিযোগিতায়। সেকালের অলিম্পিক প্রতিযোগীদের যেসব ভাস্কর্য পাওয়া যায়, তার সবই নগ্ন। অলিম্পিক প্রতিযোগীদের শরীর যে সুঠাম হবেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই শরীরকে তাঁরা কোনোভাবে আবৃত তো করতেনই না, বরং জলপাই তেলের মালিশ সেই পৌরুষকেই আরও জাগিয়ে রাখত। এই নগ্নতা ছিল উৎসবেরই অঙ্গ। কিন্তু সমস্যা হল, একসঙ্গে এত সুঠাম পুরুষের খেলাধুলো যতই দৃষ্টিসুখ দিক না কেন, নারীদের কি সেই সুখের ভাগীদার করা চলে? নগ্ন নারীকে প্রকাশ্যে বা গোপনে দেখা পুরুষের প্রায় অধিকারের মধ্যে পড়লেও, নারীকে তো সে অধিকার দেওয়া যাবে না। সুতরাং নারীর জন্যেই জারি হল নিষেধাজ্ঞা। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, কুমারী নারীরা খেলার আসরে যেতে পারতেন। তবে বিবাহিতারা নৈব নৈব চ। পরপুরুষকে দেখা যে ঘোরতর পাপ! ২য় শতাব্দীর এক পর্যটক পসানিয়াস লিখেছেন যে, এই নিষেধ না মানলে শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। তবে আইন থাকলেও, সে আইন কখনও কার্যকর হয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ ছিল তাঁর।
:আরও শুনুন:
শেষবেলায় স্বপ্নভঙ্গ! অলিম্পিকে তীরে এসে তরী ডুবেছিল যে ভারতীয়দের
এই নগ্নতার কারণেই, মহিলাদের প্রতিযোগী হিসেবে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করাও সম্ভব ছিল না সেকালে। পরে অবশ্য স্পার্টায় পুরুষ ও মহিলা উভয়েই নগ্ন হয়ে খেলায় অংশগ্রহণ করতেন বলে শোনা যায়। তবে আথেন্সে নারীদের প্রতি রক্ষণশীলতা ছিল অনেকটাই বেশি। তবে হাজার বছর পরে সেই সময়ের কথা নির্ভুলভাবে জানাও যাবে না আর।